সপ্তম শ্রেণি | ইতিহাস | চতুর্থ অধ্যায়: সুলতানী শাসন



📚 সপ্তম শ্রেণি | ইতিহাস | চতুর্থ অধ্যায়: সুলতানী শাসন

🔟 দশটি পূর্ণাঙ্গ ৫ নম্বরের প্রশ্নোত্তর


❓ ৬. কুতুবউদ্দিন আইবক কে ছিলেন? তাঁর প্রধান কাজগুলো উল্লেখ করো।

উত্তর:
কুতুবউদ্দিন আইবক ছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত এবং মোহাম্মদ ঘোরীর দাস ও সেনাপতি। ঘোরীর মৃত্যুর পর ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি দিল্লির সুলতান হিসাবে সিংহাসনে বসেন।
তাঁকে দিল্লির সুলতানী শাসনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ধরা হয়।

🔹 তিনি দিল্লি ও আজমীরকে রাজধানী করেন।
🔹 তাঁর শাসনকালে লাহোর ও দিল্লি শহর গড়ে ওঠে।
🔹 তিনি “লক্ষণবতী অভিযান” পরিচালনা করে বাংলার কিছু অংশ অধিকার করেন।
🔹 কুতুব মিনারের নির্মাণ কাজ তাঁর আমলে শুরু হয়।
🔹 তিনি দানশীলতার জন্য “লক্ষণবতীর খিরাত” বা “দীন-ইলাহী” উপাধি পান।

📌 উপসংহার: কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লির প্রথম স্বাধীন তুর্কি সুলতান হিসেবে রাজনৈতিক স্থিতি ও প্রশাসনিক ভিত্তি তৈরি করেছিলেন।


❓ ৭. ‘চাহালগানি’ কীভাবে দিল্লি সুলতানদের জন্য সমস্যা তৈরি করেছিল?

উত্তর:
চাহালগানি ছিল ৪০ জন তুর্কি অভিজাত আমিরের একটি পরামর্শদাতা গোষ্ঠী। যদিও ইলতুৎমিস এই দলটি গঠন করেছিলেন শাসন কাজে সাহায্যের জন্য, পরে তারা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

🔹 তারা ক্ষমতার লোভে একাধিক সুলতানকে পদচ্যুত করে।
🔹 রজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকে হত্যা করায় তাদের ভূমিকা ছিল।
🔹 নিজেদের ইচ্ছামতো সুলতান নির্বাচনে চাহালগানি একক প্রভাব খাটায়।
🔹 তারা দিল্লির কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল করে তোলে।

📌 উপসংহার: পরবর্তীতে বলবন চাহালগানিকে ধ্বংস করে দিল্লির সুলতানী শাসনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে শাসন শক্তিশালী করেন।


❓ ৮. বলবনের শাসনের বিশেষতাগুলো আলোচনা করো।

উত্তর:
বলবন ছিলেন দিল্লির সুলতানদের মধ্যে অন্যতম কঠোর শাসক। তাঁর শাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

🔹 তিনি “রাজতন্ত্রই ঈশ্বরপ্রদত্ত” এই নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন।
🔹 দরবারে কঠোর নিয়ম এবং “সিজদাহ” ও “জমলাহ” চালু করেন।
🔹 চাহালগানি ধ্বংস করে সুলতানের একক কর্তৃত্ব স্থাপন করেন।
🔹 বিচারব্যবস্থায় শৃঙ্খলা এবং কড়া শাস্তি চালু করেন।
🔹 সীমান্তে মঙ্গোল আক্রমণ প্রতিহত করেন এবং রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন।

📌 উপসংহার: বলবনের কঠোর নীতিগুলো দিল্লি সুলতানী শাসনকে সংহত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

পরবর্তী প্রশ্নোত্তরের জন্য লিংক


❓ ৯. মুহাম্মদ বিন তুঘলক কোন কারণে “অদ্ভুত সুলতান” নামে পরিচিত?

উত্তর:
মুহাম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন তুঘলক রাজবংশের দ্বিতীয় সুলতান। তাঁর কিছু অস্বাভাবিক সিদ্ধান্ত ও নীতির কারণে তিনি “অদ্ভুত সুলতান” নামে পরিচিত।

🔹 তিনি রাজধানী দিল্লি থেকে দৌলতাবাদে স্থানান্তর করেন – যা জনগণের উপর কষ্ট চাপায়।
🔹 তামার মুদ্রা চালু করেন, কিন্তু তা জাল তৈরি হওয়ায় অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
🔹 কৃষিকর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
🔹 তিনি অনেক পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, কিন্তু বাস্তবায়ন সফল হয়নি।

📌 উপসংহার: তাঁর চিন্তাভাবনা অগ্রগামী হলেও বাস্তবায়নে ভুল হওয়ায় তিনি “অদ্ভুত” বা ব্যর্থ সংস্কারক নামে পরিচিত।


❓ ১০. সুলতানদের বিচারব্যবস্থা কেমন ছিল? বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:
দিল্লি সুলতানরা আইনের শাসনের পক্ষে ছিলেন। তারা বিচারব্যবস্থায় কঠোরতা বজায় রেখেছিলেন এবং সাধারণ মানুষ ও আমিরদের মধ্যে কোনো পক্ষপাত দেখাতেন না।

🔹 সুলতান নিজে চূড়ান্ত বিচারক ছিলেন।
🔹 বিভিন্ন বিভাগে ক্বাজী বা বিচারক নিয়োগ করা হতো।
🔹 শরিয়া (ইসলামি আইন) অনুসারে বিচার হতো, তবে প্রয়োজনে স্থানীয় আইনও মানা হতো।
🔹 অপরাধ অনুযায়ী দণ্ড নির্ধারণ ছিল অত্যন্ত কঠোর।

📌 উপসংহার: দিল্লির সুলতানদের বিচারব্যবস্থা ছিল কাঠামোগত ও নিরপেক্ষ, যা রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল।


❓ ১১. ‘ইকতা’ ব্যবস্থা কী ছিল? এর সুবিধা ও অসুবিধা লেখো।

উত্তর:
‘ইকতা’ ছিল সুলতানী আমলে রাজস্ব সংগ্রহ ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের একটি পদ্ধতি।

🔹 ইকতা নামে পরিচিত জমি দেওয়া হতো সরকারি কর্মচারীদের।
🔹 এরা রাজস্ব আদায় করত এবং নিজের ভরণপোষণ চালাত।
🔹 জমির মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে থাকত, ইকতাদার কেবল উপভোগ করত।

সুবিধা:
– রাজস্ব সংগ্রহে সুবিধা হতো
– সৈন্য বজায় রাখতে সাহায্য করত
– প্রশাসনে দক্ষতা আসত

অসুবিধা:
– অনেক সময় ইকতাদাররা বিদ্রোহ করত
– কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল হয়ে পড়ত

📌 উপসংহার: ইকতা ব্যবস্থা সুলতানী আমলে প্রশাসন সহজ করতে সাহায্য করলেও তা মাঝে মাঝে বিপজ্জনক হয়ে উঠত।


❓ ১২. দিল্লি সুলতানদের সময় নারীদের অবস্থান কেমন ছিল?

উত্তর:
সুলতানী আমলে নারীদের অবস্থান খুব বেশি শক্তিশালী ছিল না। বেশিরভাগ নারী গৃহবন্দী থাকতেন এবং সমাজে পুরুষদের তুলনায় অধিকার কম ছিল।

🔹 মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ সীমিত ছিল।
🔹 তারা সাধারণত পর্দার আড়ালে থাকতেন এবং রাজনীতিতে অংশ নিতে পারতেন না।
🔹 তবে রজিয়া সুলতানা এর ব্যতিক্রম ছিলেন।
🔹 রাজপরিবারের কিছু নারী দাসী, রাজসভার গায়িকা বা রান্নার কাজ করতেন।

📌 উপসংহার: যদিও ব্যতিক্রম কিছু নারী রাজনীতিতে অংশ নিয়েছিলেন, তবে অধিকাংশ সাধারণ নারীর অবস্থা দুর্বলই ছিল।


❓ ১৩. সুলতানী আমলে রাজস্ব ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

উত্তর:
দিল্লি সুলতানরা রাজস্ব ব্যবস্থাকে একটি সংগঠিত কাঠামোর মধ্যে এনেছিলেন।

🔹 কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিজমির উপর কর আদায় হতো।
🔹 জমির পরিমাণ ও উর্বরতা অনুযায়ী কর নির্ধারিত হতো।
🔹 ইকতাদারদের মাধ্যমে কর আদায় করা হতো।
🔹 অনেকে ফসলের এক-তৃতীয়াংশ রাজস্ব হিসাবে দিত।

📌 উপসংহার: এই করব্যবস্থা রাজকোষে আয় বাড়াতে সাহায্য করলেও অনেক সময় কৃষকদের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়াত।


❓ ১৪. দিল্লি সুলতানরা মুদ্রা ব্যবস্থা কিভাবে গড়ে তুলেছিলেন?

উত্তর:
সুলতানী শাসনে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি নির্দিষ্ট মুদ্রা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।

🔹 ইলতুৎমিস রুপোর মুদ্রা “টঙ্কা” এবং তামার মুদ্রা “জিত্তাল” চালু করেন।
🔹 প্রতিটি মুদ্রায় সুলতানের নাম ও খলিফার নাম থাকত।
🔹 মুহাম্মদ বিন তুঘলক তামার মুদ্রা চালু করলেও তা ব্যর্থ হয়।
🔹 এই মুদ্রা ব্যবস্থার মাধ্যমে কর আদায় ও বাণিজ্য সহজ হয়।

📌 উপসংহার: মুদ্রা ব্যবস্থা সুলতানী শাসনে অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রিত ও স্থিতিশীল রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছিল।


❓ ১৫. দিল্লি সুলতানদের সময় বাংলার অবস্থা কেমন ছিল?

উত্তর:
দিল্লি সুলতানদের শাসনকালে বাংলাকে অধিকাংশ সময় দিল্লির অধীন প্রদেশ হিসেবে গণ্য করা হতো, কিন্তু বাংলায় প্রায়শই বিদ্রোহ ও স্বাধীন শাসকের উত্থান দেখা যেত।

🔹 ইলতুৎমিস ও বলবনের সময় বাংলায় বিদ্রোহ দমন করা হয়।
🔹 বাংলায় বাংলার গভর্নররা অনেক সময় স্বাধীনভাবে শাসন করতেন।
🔹 তুঘলক আমলে বাংলার শাসকরা কেন্দ্রের অধীন মানতেন না।
🔹 পরে বাংলায় স্বতন্ত্র সুলতানী রাজবংশ গড়ে ওঠে।

📌 উপসংহার: দিল্লি সুলতানদের নিয়ন্ত্রণ বাংলায় ছিল দুর্বল। এখানে একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক ধারার বিকাশ ঘটে।

প্রশ্ন ১:


১৬। আলাউদ্দিন খিলজির সামরিক অভিযানের বিবরণ দাও।


✅ উত্তর:

আলাউদ্দিন খিলজি ছিলেন খিলজি বংশের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সফল সুলতান। তাঁর সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তিনি ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জয় করেন এবং একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।


🔹 উত্তরে অভিযান:

– মঙ্গোলদের একাধিকবার আক্রমণ প্রতিহত করেন।

– সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা গড়ে তোলেন।

– পাঞ্জাব ও সিন্ধু অঞ্চলে তাঁর শাসন সুদৃঢ় হয়।


🔹 পশ্চিম ও মধ্য ভারতে:

– গুজরাট জয় করেন এবং বহু সম্পদ দিল্লিতে নিয়ে আসেন।

– রানায়না ও রাজপুতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালান।

– চিতোর দখল করেন, যেখানে রাজপুত রানী পদ্মিনীর গল্প খুবই জনপ্রিয়।


🔹 দক্ষিণ ভারতের দিকে:

– দক্ষিণ ভারতে প্রথম বড় অভিযান চালান।

– মালিক কাফুরের নেতৃত্বে দাক্ষিণাত্যের যাদব, হোয়সাল ও পাণ্ড্য রাজ্য আক্রমণ করে প্রচুর খাজনা ও ধনসম্পদ আদায় করেন।


📌 উপসংহার:

আলাউদ্দিন খিলজির সামরিক দক্ষতা ও যুদ্ধ পরিচালনার কৌশল তাঁকে ভারতের অন্যতম সফল শাসকে পরিণত করে। তাঁর শাসন আমলে দিল্লি সুলতানী শাসনের ভৌগোলিক পরিধি সবচেয়ে বিস্তৃত হয়।



--- পরবর্তী প্রশ্নোত্তরের জন্য লিংক 

 https://edusmiths.blogspot.com/2025/08/blog-post_5.html


❓ প্রশ্ন ১৭:


আলাউদ্দিন খিলজির অর্থনৈতিক সংস্কারগুলো কী ছিল? বিশ্লেষণ করো।


✅ উত্তর:

আলাউদ্দিন খিলজি প্রশাসনকে সংগঠিত ও শক্তিশালী করার জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংস্কার করেছিলেন। তাঁর এই সংস্কারগুলো সাধারণ জনগণ ও সৈন্যদের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলেছিল।


🔹 মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতি:

– বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নির্ধারণ করে দেন।

– নির্দিষ্ট দামে চাল, গম, কাপড়, লবণ ইত্যাদি বিক্রি হতো।

– যারা অতিরিক্ত দাম নিত, তাদের শাস্তি দেওয়া হতো।


🔹 বাজার ব্যবস্থা:

– তিনটি আলাদা বাজার চালু করেন – খাদ্যদ্রব্য, কাপড়, ও ঘোড়া-দাস-বস্ত্রের জন্য।

– প্রতিটি বাজারে সরকারের নিয়োজিত কর্মকর্তা নজরদারি করত।

– বাজার নিয়ন্ত্রণে "দিআন-ই-রিয়াসত" নামক দপ্তর গঠন করেন।


🔹 রাজস্ব সংস্কার:

– কৃষকদের থেকে জমির প্রকৃতি অনুযায়ী কর আদায় করা হতো।

– মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমিয়ে কৃষকদের সরাসরি সরকারের আওতায় আনা হয়।


📌 উপসংহার:

আলাউদ্দিন খিলজির অর্থনৈতিক সংস্কার ছিল অত্যন্ত কড়া ও কার্যকর। এর ফলে সেনাবাহিনী পরিচালনা সহজ হয় এবং জনজীবনে ন্যায্যতা ফিরে আসে।

আগের প্রশ্নোত্তরের লিংক :

https://edusmiths.blogspot.com/2025/08/blog-post.html

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শেরপুর: ইতিহাস ও বর্তমানের এক হৃদয়ছোঁয়া গল্প

শেরশাহবাদিয়া ভাষা: বাংলা ভাষার আঞ্চলিক রূপ না কি ভিন্ন একটি লোকভাষা?

সাবান। কোনটা কি ধরনের। সরকারি নির্দেশনামাতে সাবান সম্পর্কে কি বলা আছে জানতে পড়ুন...