মধ্যযুগ বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ নয় – পর্ব ২

মধ্যযুগ: বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ নয় – পর্ব ২

প্রথম পর্বে (মধ্যযুগ: বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ নয় – পর্ব ১) আমরা আলোচনা করেছিলাম কেন ‘অন্ধকার যুগ’ বলাটা ইতিহাসের একপাক্ষিক ব্যাখ্যা। এবার আমরা মধ্যযুগীয় সাহিত্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারার দিকে নজর দিই।

📜 কাব্যধারা ও ধর্মীয় প্রভাব

মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল কাব্যিক রূপ ও ধর্মীয় আবেশ। কিন্তু এটি কেবল ধর্মীয় শিক্ষার গণ্ডিতে আবদ্ধ ছিল না। বরং জীবনের গভীর অনুভূতি, প্রেম, সমাজচিত্রও সাহিত্যে উঠে এসেছে।

🔹 চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতি

চণ্ডীদাসের “শুন্‌ গোপীনাথ, তোরে প্রেমে পড়িলাম” কিংবা বিদ্যাপতির “পিয়ারে দেখা না পাইলাম চোখে”— এ সমস্ত পদাবলি শুধুই ভক্তি নয়, গভীর প্রেম ও মানবীয় অনুভবের প্রকাশ।

🔹 বৈষ্ণব পদাবলি

বৈষ্ণব সাহিত্যের বিশেষ দিক ছিল ‘মানবপ্রেমের’ রূপায়ণ। শ্রীচৈতন্যদেবের প্রভাবে রাধাকৃষ্ণের প্রেম-লীলাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য কবি পদ রচনা করেন। জ্ঞানদাস, গোবিন্দ দাস, দীনবন্ধু দাস প্রমুখের রচনায় দেখা যায় রূপক ভাষায় সামাজিক বাস্তবতা।

🔹 রামায়ণ ও মহাভারতের অনুবাদ

কৃত্তিবাস ওঝার ‘কৃত্তিবাসী রামায়ণ’ এবং কাশীরাম দাসের ‘মহাভারত’ বাংলা ভাষায় কাব্যিক ভাবসম্পন্ন করে তোলে। এইসব রচনার মাধ্যমে ধর্মের পাঠের পাশাপাশি লোকজ ভাষা ও রীতির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়।

📚 মানবিকতা ও জীবনচর্চার প্রতিফলন

ধর্মীয় আখ্যানে মানব জীবনের বাস্তবতা— যেমন ভালবাসা, বিচ্ছেদ, দুঃখ— প্রবলভাবে উপস্থিত। একে "ধর্ম-কেন্দ্রিক জীবনতত্ত্ব" বললে ভুল হবে না। এ সাহিত্য সাধারণ মানুষের অনুভবকেই সাহিত্যে প্রতিষ্ঠা করেছে।

📌 তথ্যসূত্র

  • সুকুমার সেন, ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস’, সংস্করণ-২
  • শিবনারায়ণ রায়, ‘মধ্যযুগ ও তার প্রাসঙ্গিকতা’
  • ড. সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায়, ‘বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ’

🔗 অভ্যন্তরীণ লিংক

আগামী পর্বে আমরা দেখব কীভাবে এই সাহিত্য ধারা পরবর্তী যুগের আধুনিক সাহিত্যের ভিত্তি তৈরি করেছিল।

লেখা: এডুস্মিথস গবেষণা বিভাগ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শেরপুর: ইতিহাস ও বর্তমানের এক হৃদয়ছোঁয়া গল্প

শেরশাহবাদিয়া ভাষা: বাংলা ভাষার আঞ্চলিক রূপ না কি ভিন্ন একটি লোকভাষা?

সাবান। কোনটা কি ধরনের। সরকারি নির্দেশনামাতে সাবান সম্পর্কে কি বলা আছে জানতে পড়ুন...