মধ্যযুগে ভারতের সংস্কৃতি পর্ব ২ | সাহিত্য, স্থাপত্য ও শিল্পকলার বিকাশ

মধ্যযুগে ভারতের সাহিত্য ও শিল্পকলার বিকাশ

📖 পূর্ববর্তী পর্ব পড়ুন: ১ম পর্ব: ভূমিকা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ধর্মীয় জীবন

মধ্যযুগে ভারতের স্থাপত্য ও সাহিত্যচর্চা

সাহিত্য ও ভাষার বিকাশ

মধ্যযুগে ভারতের ভাষা ও সাহিত্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক ভাষাগুলোর যেমন বাংলা, হিন্দি, তামিল, কন্নড়, গুজরাটি ও উর্দুর বিকাশ ঘটে। এই সময়ে ধর্মীয় ও ভক্তিমূলক সাহিত্য বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়।

ভক্তি আন্দোলনের প্রভাবে কবীরা, তুলসীদাস, মীরাবাঈ, বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস প্রমুখ কবিরা সাধারণ মানুষের ভাষায় ঈশ্বরভক্তির গান ও কবিতা রচনা করেন। বাংলা ভাষায় মনসামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল প্রভৃতি মঙ্গলকাব্যের প্রচলন ঘটে। অপরদিকে, মুঘল আমলে উর্দু ও ফারসি ভাষায় কাব্যচর্চা, ইতিহাসলেখা (যেমন – আকবরনামা), ও নকশা-রচনার প্রসার ঘটে।

তামিল ভাষায় অলগাপ্পা ও মনিকবাচগমের মতো সাধুরা ধর্মীয় শিক্ষা, নীতিকথা ও সমাজসংস্কারের বার্তা ছড়ান। ইসলামী পটভূমিতে পারস্য-আরব সাহিত্যের ভাব ও ছন্দে প্রভাবিত নতুন ধারার চর্চা শুরু হয়। এতে ভারতীয় সাহিত্যে এক সমৃদ্ধ সংমিশ্রণ সৃষ্টি হয়।

স্থাপত্য, চিত্রকলা ও কারুশিল্প

মধ্যযুগীয় ভারতের স্থাপত্যে বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যের অনন্য নিদর্শন দেখা যায়। দিল্লি সালতানাতের আমলে ইট ও পাথরের ব্যবহার করে গড়ে ওঠে বিশাল মসজিদ, মাদ্রাসা ও মকবরাসমূহ। কুৎব মিনার, কুয়তুল ইসলাম মসজিদ, গোল গুম্বজ — এসব স্থাপত্য নিদর্শনে ইসলামি জ্যামিতিক নকশা, খচিত আরবি লেখনী ও মেহরাবের ব্যবহার চোখে পড়ে।

মুঘল আমলে স্থাপত্য শৈলী আরও বিকশিত হয়। আগ্রার তাজমহল, দিল্লির লালকেল্লা, ফতেপুর সিক্রির জামা মসজিদ প্রভৃতি স্থাপত্যে পারস্য ও ভারতীয় রীতির চমৎকার সংমিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। মার্বেল খোদাই, পিয়েত্রা দুরা (পাথরের গাঁথুনি), ও সিমেট্রিক ডিজাইনের দৃষ্টান্ত এসব স্থাপত্যে ফুটে উঠেছে।

হিন্দু রাজ্যগুলোতেও মন্দির নির্মাণে স্থাপত্যের বিশেষ উন্নতি ঘটে—খাজুরাহো, কনার্ক, মধুকৈক এবং দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড় মন্দিরে নিখুঁত ভাস্কর্য ও অলঙ্করণ দেখা যায়। চিত্রকলায় মুঘল মিনিয়েচার, রাজপুত চিত্রশৈলী ও পাল রাজবংশের বৌদ্ধচিত্র উল্লেখযোগ্য।

কারুশিল্পের ক্ষেত্রেও মধ্যযুগ ছিল সৃজনশীলতার সময়—কার্পেট বুনন, ধাতুবর্ত্তী শিল্প, মাটির কাজ, জামদানি ও জরি শিল্প ইত্যাদি সমৃদ্ধ হয়। মুসলিম ও হিন্দু কারিগরদের সম্মিলিত উদ্যোগে এসব শিল্পে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়।

📌 পরবর্তী পর্বে পড়ুন: মধ্যযুগীয় ভারতের সংগীত, নৃত্য, বিজ্ঞান ও নারীর অবস্থান

লেবেল: মধ্যযুগ, ভারতের সংস্কৃতি, সাহিত্য, স্থাপত্য, মুঘল চিত্রকলা, কারুশিল্প, ইতিহাস

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শেরপুর: ইতিহাস ও বর্তমানের এক হৃদয়ছোঁয়া গল্প

শেরশাহবাদিয়া ভাষা: বাংলা ভাষার আঞ্চলিক রূপ না কি ভিন্ন একটি লোকভাষা?

সাবান। কোনটা কি ধরনের। সরকারি নির্দেশনামাতে সাবান সম্পর্কে কি বলা আছে জানতে পড়ুন...