মেঘ বিজন পদ্ধতি কি? কৃত্রিম বৃষ্টিপাত কিভাবে হয় ? এ পদ্ধতি কবে কোথায় প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল? ভারতে মেঘবীজন পদ্ধতি কবে প্রথম ব্যবহার করা হয়? এই পদ্ধতি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা What is cloud seeding? How work it?

**মেঘ বীজন পদ্ধতি: একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন**
### মেঘ বীজন পদ্ধতি কী?

মেঘ বীজন (Cloud Seeding) হলো একটি আবহাওয়া পরিবর্তনের কৌশল, যার মাধ্যমে মেঘের মধ্যে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাত বা তুষারপাত উৎসাহিত করা হয়। এই পদ্ধতিতে মেঘের ভিতরে নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থ প্রবেশ করানো হয়, যা পানির কণা বা বরফের স্ফটিক তৈরি করতে সাহায্য করে। এর ফলে মেঘের পানির কণা বা বরফের কণা বড় হয়ে ভারী হয় এবং বৃষ্টি বা তুষার আকারে পড়ে।

**ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ:**
- **সিলভার আয়োডাইড (AgI):** এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কারণ এর স্ফটিক কাঠামো বরফের মতো, যা মেঘে বরফের কণা তৈরি করতে সাহায্য করে।
- **ড্রাই আইস (CO₂):** এটি মেঘের তাপমাত্রা কমিয়ে বরফের কণা গঠনে সহায়তা করে।
- **ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড:** উষ্ণ মেঘে পানির কণা ঘনীভূত করতে ব্যবহৃত হয়।
- **অন্যান্য:** কিছু ক্ষেত্রে লিকুইড প্রোপেন বা হাইগ্রোস্কোপিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়।

**প্রক্রিয়া:**
1. **মেঘ নির্বাচন:** উপযুক্ত মেঘ (যেমন কিউমুলোনিম্বাস বা স্ট্রাটোকিউমুলাস) চিহ্নিত করা হয়, যেগুলোতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা রয়েছে।
2. **রাসায়নিক প্রয়োগ:** রাসায়নিক পদার্থগুলো বিমান, রকেট, বা স্থলভিত্তিক জেনারেটরের মাধ্যমে মেঘে প্রবেশ করানো হয়।
3. **বৃষ্টিপাত:** রাসায়নিক পদার্থ মেঘের কণার সাথে মিশে বৃষ্টি বা তুষারপাত ঘটায়।

### মেঘ বীজনের ইতিহাস: প্রথম ব্যবহার

মেঘ বীজনের ধারণা প্রথম উদ্ভাবিত হয় ১৯৪০-এর দশকে। এর প্রথম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা হয়েছিল **মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে**।

- **১৯৪৬ সাল:** আমেরিকান বিজ্ঞানী **ভিনসেন্ট শেফার** প্রথম ল্যাবরেটরিতে ড্রাই আইস ব্যবহার করে মেঘে বরফের কণা তৈরি করেন। একই বছর তিনি নিউ ইয়র্কের মাউন্ট ওয়াশিংটনের কাছে বিমান থেকে ড্রাই আইস ছড়িয়ে মেঘ বীজনের প্রথম পরীক্ষা করেন।
- **১৯৪৭ সাল:** **বার্নার্ড ভনেগাট** (ভিনসেন্ট শেফারের সহকর্মী) সিলভার আয়োডাইডের ব্যবহার আবিষ্কার করেন, যা মেঘ বীজনে আরও কার্যকর প্রমাণিত হয়। এই পরীক্ষাগুলো জেনারেল ইলেকট্রিকের গবেষণাগারে পরিচালিত হয়।
- **প্রাথমিক উদ্দেশ্য:** প্রাথমিকভাবে এটি আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ, খরা মোকাবিলা, এবং কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।

### পরবর্তীতে কোথায় কোথায় ব্যবহৃত হয়েছিল?

মেঘ বীজনের প্রযুক্তি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য দেশ ও তাদের ব্যবহারের বিবরণ দেওয়া হলো:
1. **মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র:**
   - ১৯৫০-এর দশকে মেঘ বীজন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলের খরা-প্রবণ এলাকায়।
   - উদাহরণ: ক্যালিফোর্নিয়ায় জলাধারে পানি সরবরাহ বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। ২০২১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার খরা মোকাবিলায় মেঘ বীজন প্রকল্প চালানো হয়।
   - উদ্দেশ্য: জল সরবরাহ, তুষারপাত বাড়ানো, এবং কৃষি সহায়তা।

2. **চীন:**
   - চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেঘ বীজন কর্মসূচি পরিচালনা করে। ১৯৫৮ সাল থেকে তারা এই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করে।
   - উদাহরণ: ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকের সময় বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের জন্য মেঘ বীজন ব্যবহার করা হয়। তারা রকেট ও বিমান ব্যবহার করে সিলভার আয়োডাইড ছড়ায়।
   - উদ্দেশ্য: খরা মোকাবিলা, বায়ু দূষণ কমানো, এবং কৃষি উৎপাদন বাড়ানো।
   - তথ্য: চীন বছরে প্রায় ৫০,০০০ মেঘ বীজন অভিযান চালায়।

3. **সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE):**
   - মরুভূমি অঞ্চল হওয়ায় UAE ১৯৯০-এর দশকে মেঘ বীজন শুরু করে।
   - উদাহরণ: ২০২১ সালে দুবাইয়ে কৃত্রিম বৃষ্টি সৃষ্টির জন্য ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
   - উদ্দেশ্য: পানির সংকট মোকাবিলা এবং ভূগর্ভস্থ পানির মজুত বাড়ানো।

4. **ভারত:**
   - ভারত ১৯৮০-এর দশকে মেঘ বীজন পরীক্ষা শুরু করে, বিশেষ করে তামিলনাড়ুতে।
   - উদাহরণ: মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, এবং অন্ধ্রপ্রদেশে খরা মোকাবিলায় এটি ব্যবহৃত হয়। ২০১৯ সালে মুম্বাইয়ে বৃষ্টি বাড়ানোর জন্য পরীক্ষা চালানো হয়।
   - উদ্দেশ্য: কৃষি উৎপাদন বাড়ানো এবং খরা মোকাবিলা।

5. **অস্ট্রেলিয়া:**
   - ১৯৬০-এর দশকে তাসমানিয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মেঘ বীজন শুরু হয়।
   - উদাহরণ: নিউ সাউথ ওয়েলসে তুষারপাত বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
   - উদ্দেশ্য: জলবিদ্যুৎ ও কৃষি সহায়তা।

6. **রাশিয়া:**
   - রাশিয়া ১৯৭০-এর দশকে মেঘ বীজন শুরু করে। তারা প্রায়শই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অনুষ্ঠানে (যেমন ভিক্টরি ডে প্যারেড) বৃষ্টি প্রতিরোধ করতে এটি ব্যবহার করে।
   - উদ্দেশ্য: আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি সহায়তা।

7. **অন্যান্য দেশ:**
   - **থাইল্যান্ড:** রাজা ভূমিবল আদুল্যাদেজের উদ্যোগে ১৯৬৯ সাল থেকে মেঘ বীজন ব্যবহৃত হয়।
   - **ইসরায়েল:** পানির সংকট মোকাবিলায় ১৯৭০-এর দশকে শুরু।
   - **দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, মরক্কো:** কৃষি এবং পানি সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত।

### মানবকল্যাণে মেঘ বীজনের ব্যবহার

মেঘ বীজন পদ্ধতি মানবকল্যাণে ব্যবহার করা যায়, তবে এর কার্যকারিতা এবং পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে। নিচে এর সম্ভাব্য সুবিধা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হলো:

**সুবিধা:**
1. **খরা মোকাবিলা:** খরা-প্রবণ এলাকায় বৃষ্টিপাত বাড়িয়ে পানির সংকট কমানো যায়। উদাহরণ: ভারত ও UAE-তে এটি সফলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
2. **কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি:** পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ফসলের উৎপাদন বাড়ায়, যা খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়তা করে।
3. **জলাধার পূর্ণ করা:** জলাধার ও ভূগর্ভস্থ পানির মজুত বাড়ানোর জন্য বৃষ্টি বা তুষারপাত বাড়ানো যায়।
4. **বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ:** চীনে বৃষ্টির মাধ্যমে বায়ু দূষণ কমানোর জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
5. **জলবিদ্যুৎ উৎপাদন:** অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে তুষারপাত বাড়িয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়।
6. **প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ:** কিছু ক্ষেত্রে ঝড় বা শিলাবৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের জন্য মেঘ বীজন ব্যবহৃত হয়।

**চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা:**
1. **কার্যকারিতার অনিশ্চয়তা:** মেঘ বীজন সবসময় সফল হয় না। এর কার্যকারিতা মেঘের ধরন, আর্দ্রতা, এবং তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি বৃষ্টিপাত ৫-২০% বাড়াতে পারে, তবে ফলাফল সবসময় নিশ্চিত নয়।
2. **পরিবেশগত প্রভাব:** সিলভার আয়োডাইডের মতো রাসায়নিক পদার্থ মাটি ও পানিতে জমা হলে পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে, যদিও এর পরিমাণ খুবই কম।
3. **আঞ্চলিক বিরোধ:** একটি অঞ্চলে বৃষ্টি বাড়ালে অন্য অঞ্চলে বৃষ্টি কমতে পারে, যা আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে।
4. **উচ্চ ব্যয়:** মেঘ বীজনের জন্য বিমান, রকেট, বা ড্রোন ব্যবহার করতে হয়, যা ব্যয়বহুল।
5. **নৈতিক প্রশ্ন:** আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ নৈতিকভাবে সঠিক কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

**মানবকল্যাণে ব্যবহারের সম্ভাবনা:**
- মেঘ বীজন মানবকল্যাণে ব্যবহার করা যায়, বিশেষ করে পানির সংকট মোকাবিলা, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব কমানোর জন্য।
- তবে, এটি ব্যবহারের আগে পরিবেশগত প্রভাব, ব্যয়-কার্যকারিতা, এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিবেচনা করা প্রয়োজন।
- বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এর নিরাপদ ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে।

### উপসংহার

মেঘ বীজন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, যা ১৯৪৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ব্যবহৃত হয় এবং পরবর্তীতে চীন, UAE, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি খরা মোকাবিলা, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো, এবং পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার মতো মানবকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে, এর পরিবেশগত প্রভাব এবং কার্যকারিতার অনিশ্চয়তার কারণে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত। ভবিষ্যতে আরও গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উন্নতির মাধ্যমে মেঘ বীজন মানবকল্যাণে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।[](https://en.wikipedia.org/wiki/Seed)

https://www.anandabazar.com/amp/photogallery/what-is-cloud-seeding-and-why-indonesia-is-using-the-process-in-nusantara-dgtl-photogallery/cid/1525833

বর্তমানে আমাদের দেশে কেন এই পদ্ধতি ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হয় না?   
ভারতের খরা-কবলিত রাজ্যগুলোতে মেঘ বীজন (Cloud Seeding) পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত না হওয়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যা বৈজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা যায়। নিচে এর প্রধান কারণগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

### ১. বৈজ্ঞানিক সীমাবদ্ধতা

- **উপযুক্ত মেঘের প্রয়োজনীয়তা:** মেঘ বীজন কার্যকর হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত আর্দ্রতাযুক্ত মেঘের উপস্থিতি অপরিহার্য। খরা-কবলিত অঞ্চলে প্রায়শই এমন মেঘ থাকে না, যা বৃষ্টিপাতের জন্য উপযুক্ত। ভারত সরকারের ২০১৭ সালের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মেঘ বীজন শুধুমাত্র "পূর্ব-বিদ্যমান উপযুক্ত মেঘকে" উদ্দীপিত করতে পারে, তবে খরা পরিস্থিতিতে বৃষ্টি আনার বিকল্প হিসেবে এটি কার্যকর নয়।

[](https://www.indiatoday.in/pti-feed/story/cloud-seeding-cannot-be-used-to-bring-adequate-rains-govt-907107-2017-04-12)


- **কার্যকারিতার অনিশ্চয়তা:** গবেষণায় দেখা গেছে, মেঘ বীজন বৃষ্টিপাত ৫-২০% বাড়াতে পারে, তবে এটি সবসময় নিশ্চিত নয়। খরা-কবলিত অঞ্চলে ফলাফল আরও অনিশ্চিত, কারণ মেঘের আর্দ্রতা কম থাকে। উদাহরণস্বরূপ, পাহাড়ি অঞ্চলে (যেমন আমেরিকার নেভাডা) এটি তুষারপাত বাড়াতে কার্যকর, কিন্তু সমতল ভূমিতে এর ফলাফল মিশ্র।[]

(https://timesofindia.indiatimes.com/world/middle-east/how-cloud-seeding-boosts-rainfall-and-why-thats-controversial/articleshow/109377959.cms)


- **অপর্যাপ্ত গবেষণা:** ভারতে মেঘ বীজন নিয়ে গবেষণা চলছে (যেমন IIT কানপুরের প্রকল্প), কিন্তু এটি এখনও মূলধারায় আসেনি। ২০২১ সালে দিল্লিতে বায়ু দূষণ কমাতে মেঘ বীজনের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়, কারণ শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতার অভাব ছিল।

[](https://www.livemint.com/news/india/mint-explainer-why-cloud-seeding-is-easy-to-propose-but-hard-to-implement-11699534563332.html)


### ২. অর্থনৈতিক বাধা
- **উচ্চ ব্যয়:** মেঘ বীজনের জন্য বিমান, রকেট, বা স্থলভিত্তিক জেনারেটর প্রয়োজন, যা ব্যয়বহুল। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকার ইডাহো পাওয়ার বার্ষিক ৪০ লাখ ডলার খরচ করে মেঘ বীজনের জন্য, যা ভারতের খরা-কবলিত রাজ্যগুলোর জন্য বড় একটি বিনিয়োগ। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই অর্থ অন্য জরুরি খাতে (যেমন সেচ ব্যবস্থা, জলাধার নির্মাণ) ব্যয় করা হয়।[]

(https://www.cnbc.com/2022/12/17/how-cloud-seeding-can-help-replenish-reservoirs-in-the-west.html)


- **ঝুঁকি-ফলাফলের ভারসাম্য:** মেঘ বীজনের ফলাফল অনিশ্চিত হওয়ায়, এটি অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। ২০০০-এর দশকে অন্ধ্রপ্রদেশে মেঘ বীজনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়ে।[](https://www.quora.com/Why-dont-we-use-cloud-seeding-technique-in-severe-drought-stricken-parts-of-India)


- **অগ্রাধিকারের অভাব:** খরা মোকাবিলায় ভারত সরকার সেচ প্রকল্প, ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা, এবং ফসল বৈচিত্র্যকরণের মতো দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে বেশি জোর দেয়। মেঘ বীজনের তুলনায় এগুলো বেশি টেকসই এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ।


### ৩. পরিবেশগত উদ্বেগ
- **রাসায়নিকের প্রভাব:** মেঘ বীজনে ব্যবহৃত সিলভার আয়োডাইডের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। যদিও গবেষণায় বলা হয়, এটি অল্প পরিমাণে নিরাপদ, তবুও মাটি ও পানিতে এর দীর্ঘমেয়াদী জমা হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।[](https://www.nextias.com/blog/cloud-seeding/)


- **আঞ্চলিক ভারসাম্যহীনতা:** একটি অঞ্চলে বৃষ্টি বাড়ালে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বৃষ্টি কমতে পারে, যা আঞ্চলিক বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে। চীনে প্রতিবেশী অঞ্চলগুলো একে অপরের উপর "বৃষ্টি চুরি"র অভিযোগ তুলেছে।[](https://en.wikipedia.org/wiki/Cloud_seeding)

- **জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব:** জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেঘের ধরন ও আর্দ্রতা পরিবর্তিত হচ্ছে, যা মেঘ বীজনের কার্যকারিতা কমিয়ে দিচ্ছে।[](https://www.scientificamerican.com/article/eight-states-are-seeding-clouds-to-overcome-megadrought/)


### ৪. রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণ
- **জনসাধারণের বিরোধিতা:** মেঘ বীজন নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে সন্দেহ ও ভুল ধারণা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকার নিউ মেক্সিকোতে পরিবেশগত উদ্বেগ ও স্থানীয় উপজাতিদের সাথে পরামর্শের অভাবে একটি প্রকল্প বাতিল হয়। ভারতেও এমন বিরোধিতা দেখা দিতে পারে।[]

(https://e360.yale.edu/features/can-cloud-seeding-help-quench-the-thirst-of-the-u.s.-west)


- **রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির অভাব:** মেঘ বীজন একটি ঝুঁকিপূর্ণ ও বিতর্কিত প্রযুক্তি। রাজনৈতিক নেতারা এর ব্যর্থতার জন্য সমালোচনার মুখে পড়তে পারেন, যেমন অন্ধ্রপ্রদেশে হয়েছিল।[]

(https://www.quora.com/Why-dont-we-use-cloud-seeding-technique-in-severe-drought-stricken-parts-of-India)


- **আইনি ও নিয়ন্ত্রণগত জটিলতা:** ভারতে মেঘ বীজনের জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও অনুমোদন প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লিতে মেঘ বীজনের প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদনের জন্য জমা দিতে হয়েছিল।[](https://www.livemint.com/news/india/mint-explainer-why-cloud-seeding-is-easy-to-propose-but-hard-to-implement-11699534563332.html)


### ৫. অভিজ্ঞতা ও অবকাঠামোর অভাব
- **সীমিত অভিজ্ঞতা:** ভারতে মেঘ বীজনের ইতিহাস রয়েছে (যেমন তামিলনাড়ুতে ১৯৮৩-৮৭, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে ২০০৩-০৪), কিন্তু এটি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। অভিজ্ঞতার অভাব এটিকে বড় পরিসরে প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে।[](https://en.wikipedia.org/wiki/Cloud_seeding)


- **প্রযুক্তিগত অবকাঠামো:** মেঘ বীজনের জন্য উন্নত রাডার, বিমান, এবং প্রশিক্ষিত কর্মী প্রয়োজন। ভারতের অনেক রাজ্যে এই অবকাঠামো নেই। IIT কানপুরের মতো প্রতিষ্ঠান গবেষণা করলেও, বাস্তবায়নের জন্য আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন।[]

(https://aggrp.in/cloud-seeding-cloud-seeding-india-is-gearing-up-to-improve-agriculture-production-and-air-quality-by-increasing-probability-of-precipitation/)


- **বিকল্প সমাধানের উপস্থিতি:** ভারত সরকার জল সংরক্ষণ, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, এবং নদী সংযোগ প্রকল্পের মতো বিকল্প সমাধানে বেশি মনোযোগ দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদী ও কম বিতর্কিত।

### ভারতে মেঘ বীজনের ব্যবহার: বর্তমান অবস্থা
- **কিছু রাজ্যে প্রয়োগ:** মহারাষ্ট্র ("বর্ষাধারী" প্রকল্প), কর্ণাটক ("প্রজেক্ট মেঘদূত"), তামিলনাড়ু, এবং অন্ধ্রপ্রদেশে মেঘ বীজনের পরীক্ষা চালানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মহারাষ্ট্রে ২০১৫-১৬ সালে খরা মোকাবিলায় এটি ব্যবহৃত হয়।[]

(https://www.nextias.com/blog/cloud-seeding/)


- **IIT কানপুরের প্রকল্প:** IIT কানপুর ২০২১ সালে উত্তরপ্রদেশে মেঘ বীজনের পরীক্ষা চালায় এবং বুন্দেলখণ্ডের মতো খরা-প্রবণ এলাকায় কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কাজ করছে।[]

(https://aggrp.in/cloud-seeding-cloud-seeding-india-is-gearing-up-to-improve-agriculture-production-and-air-quality-by-increasing-probability-of-precipitation/)


- **দিল্লিতে পরিকল্পনা:** ২০২৪ সালে দিল্লি সরকার বায়ু দূষণ কমাতে মেঘ বীজনের প্রস্তাব দেয়, তবে এটি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।[]

(https://www.aqi.in/blog/cloud-seeding-for-pollution-in-delhi/)



### কেন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় না?
- **খরার সমাধান নয়:** মেঘ বীজন খরার স্থায়ী সমাধান নয়, কারণ এটি শুধুমাত্র বিদ্যমান মেঘের বৃষ্টিপাত বাড়াতে পারে।[](https://www.unr.edu/nevada-today/news/2017/atp-cloud-seeding)


- **দীর্ঘমেয়াদী বিকল্পের প্রাধান্য:** ভারত সরকার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বনায়ন, জল সংরক্ষণ, এবং টেকসই কৃষির উপর বেশি জোর দেয়।


- **ঝুঁকি এড়ানোর প্রবণতা:** মেঘ বীজনের ব্যর্থতা রাজনৈতিক সমালোচনা ডেকে আনতে পারে, যা সরকার এড়াতে চায়।

- **অজ্ঞতা ও সচেতনতার অভাব:** স্থানীয় সম্প্রদায় ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে মেঘ বীজনের সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে।


### উপসংহার
ভারতের খরা-কবলিত রাজ্যগুলোতে মেঘ বীজন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত না হওয়ার প্রধান কারণ হলো এর বৈজ্ঞানিক সীমাবদ্ধতা, উচ্চ ব্যয়, পরিবেশগত উদ্বেগ, এবং দীর্ঘমেয়াদী বিকল্প সমাধানের প্রাধান্য। যদিও মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, এবং তামিলনাড়ুর মতো কিছু রাজ্যে এটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, তবুও বড় পরিসরে প্রয়োগের জন্য আরও গবেষণা, অবকাঠামো, এবং রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি প্রয়োজন। ভবিষ্যতে, পরিবেশবান্ধব উপকরণ এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মেঘ বীজন খরা মোকাবিলায় একটি সম্পূরক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তবে এটি কখনোই খরার স্থায়ী সমাধান হতে পারবে না।[]

https://indianexpress.com/article/research/cloud-seeding-from-a-weapon-of-war-to-a-solution-proposed-for-delhis-polluted-skies-9681149/

(https://www.nextias.com/blog/cloud-seeding/)

https://www.thehindu.com/sci-tech/energy-and-environment/india-hopes-cloud-seeding-can-wash-away-deadly-smog/article67582567.ece#:~:text=The%20Delhi%20government%20has%20had,to%20improve%20the%20air%20quality&text=Indian%20scientists%20are%20preparing%20cloud,be%20used%20to%20induce%20rainfall.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শেরপুর: ইতিহাস ও বর্তমানের এক হৃদয়ছোঁয়া গল্প

শেরশাহবাদিয়া ভাষা: বাংলা ভাষার আঞ্চলিক রূপ না কি ভিন্ন একটি লোকভাষা?

সাবান। কোনটা কি ধরনের। সরকারি নির্দেশনামাতে সাবান সম্পর্কে কি বলা আছে জানতে পড়ুন...