ইতিহাস সপ্তম শ্রেণির সাজেশন, পর্ব-২Class -7
Class 7 ইতিহাস | বড়ো প্রশ্নোত্তর (১ম পর্ব)
অধ্যায়: ইতিহাস ও সময়, উপমহাদেশে ইসলাম ধর্মের আগমন, দিল্লির সুলতানদের শাসনকাল
পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ৫ নম্বর প্রশ্নের পূর্ণমান প্রাপ্তির উপযোগী বিশদ উত্তরসহ প্রশ্নোত্তর:
🟩 বড়ো প্রশ্নোত্তর (প্রথম ১–৫)
-
১. ইতিহাস ও সময় – এই অধ্যায়ের মূল বিষয়বস্তু আলোচনা করো।
উত্তর: ‘ইতিহাস ও সময়’ অধ্যায়ে ইতিহাস কাকে বলে, কীভাবে সময় নির্ধারণ করা হয় এবং ইতিহাস লেখার উৎসগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ইতিহাস হলো মানুষের অতীত জীবনের লিখিত বা অ লিখিত দলিলভিত্তিক বিবরণ। ইতিহাসের সময় নির্ধারণে খ্রিস্টাব্দ, শকাব্দ, বঙ্গাব্দ প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়। সময়কে দশক, শতক, সহস্রাব্দে ভাগ করা হয়। ইতিহাস রচনায় ব্যবহার হয় সাহিত্য, দলিল, মুদ্রা, তাম্রলিপি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এই অধ্যায়ে ক্যালেন্ডার, সময় গণনা পদ্ধতি এবং সময়রেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও আলোচিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই অধ্যায়ের মাধ্যমে বুঝতে শেখে কীভাবে অতীতকে বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষালাভ করা যায়। ইতিহাস একটি জীবন্ত বিষয়, যা মানুষের জীবনধারা, সংস্কৃতি, রাষ্ট্রগঠন প্রভৃতি বিষয়ে আমাদের জ্ঞান সমৃদ্ধ করে। -
২. ইতিহাস লেখার উৎসগুলি কী কী এবং সেগুলি কীভাবে ইতিহাস রচনায় সাহায্য করে?
উত্তর: ইতিহাস লেখার উৎসকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় – লিখিত ও অলিখিত উৎস। লিখিত উৎসের মধ্যে রয়েছে তাম্রলিপি, মুদ্রা, শিলালিপি, সরকারি নথিপত্র, বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ, সাহিত্য ও ধর্মগ্রন্থ। অলিখিত উৎস হিসেবে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, পোড়ামাটির দ্রব্য, অস্ত্র, বাসনপত্র, নির্মাণশৈলী প্রভৃতি ব্যবহার হয়। মুদ্রা থেকে অর্থনৈতিক অবস্থা ও রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়, শিলালিপি ও তাম্রলিপি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও সাম্রাজ্য বিস্তারের কথা জানায়। বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ থেকে সমকালীন সমাজজীবন সম্পর্কে জানা যায়। এই উৎসগুলি ইতিহাসকারদের অতীতের বাস্তব তথ্য যাচাই ও বিশ্লেষণে সহায়তা করে, ফলে একটি নির্ভরযোগ্য ইতিহাস রচনা সম্ভব হয়। -
৩. ইসলাম ধর্মের মূল শিক্ষা ও বিশ্বাস কী কী? ভারতীয় সমাজে তা কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে?
উত্তর: ইসলাম একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম যার মূল শিক্ষা হলো “আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং হযরত মহম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল।” ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভ হল: (১) ঈমান (বিশ্বাস), (২) নামাজ (প্রার্থনা), (৩) রোজা (উপবাস), (৪) জাকাত (দান), (৫) হজ (মক্কা ভ্রমণ)। ইসলাম শান্তি, সহানুভূতি, ভ্রাতৃত্ব ও মানবতাবাদে বিশ্বাস করে। ভারতীয় সমাজে ইসলাম ধর্ম আরব ব্যবসায়ী, সুফি দরবেশ ও মুসলিম শাসকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সুফিরা তাদের সহজ ভাষা ও আধ্যাত্মিক উপদেশের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মন জয় করেন। হিন্দু-মুসলিম মেলবন্ধনের সূচনা ঘটে এবং সামাজিক সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়। ধর্মের এই মানবিক দিক ভারতীয় সমাজে ইসলামকে জনপ্রিয় করে তোলে। -
৪. আরবদের ভারত আক্রমণের কারণ ও তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তর: ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাসিম সিন্ধু আক্রমণের মাধ্যমে ভারতে আরবদের আগমন ঘটে। প্রধান কারণ ছিল: (১) ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্য, (২) বাণিজ্য সম্প্রসারণ, (৩) সিন্ধুর শাসকের দুর্বলতা, (৪) বন্দর নগরীর প্রতি আকর্ষণ। কাসিমের নেতৃত্বে আরব বাহিনী সিন্ধু দখল করে এবং মুসলিম শাসনের সূচনা করে। এর ফলে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটে, আরবি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং ভারত-আরব বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। এটি ভারতীয় ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে যা পরে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি করে। -
৫. সুফি আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ও ভারতীয় সমাজে তার প্রভাব লেখ।
উত্তর: সুফি আন্দোলন ছিল ইসলাম ধর্মের আধ্যাত্মিক ও মানবতাবাদী ধারা। সুফিরা ভক্তি, প্রেম, সহনশীলতা ও মানবসেবায় বিশ্বাস করতেন। তাঁরা কোনো রকম ধর্মীয় গোঁড়ামি না মেনে সকলের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখতেন। সুফিরা সরল জীবনযাপন করতেন এবং সংগীত, কাওয়ালি ও সাধনার মাধ্যমে ঈশ্বরসাধনা করতেন। ভারতীয় সমাজে এই আন্দোলনের প্রভাব ছিল গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দু ভক্তি আন্দোলনের সঙ্গে মিল থাকায় হিন্দু-মুসলিম ঐক্য গড়ে ওঠে। দারিদ্র্য-পীড়িত ও নিম্নবর্ণের মানুষ সুফিদের কাছে শান্তি ও সহানুভূতি লাভ করে। ফলে সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংস্কৃতির আদানপ্রদান বাড়ে।
✍️ প্রস্তুত করেছেন: shikhbooshekhabo.blogspot.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন