সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস সাজেশন, Class -7 পর্ব -৪

📚 Class 7 ইতিহাস | বড়ো প্রশ্নোত্তর (মোগল শাসনকাল)

অধ্যায়: মোগল সাম্রাজ্য (১৫২৬–১৭০৭ খ্রিঃ পর্যন্ত)

🎯 নির্দেশনা: নিচের প্রশ্নোত্তরগুলো পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য উপযোগী এবং ৫ নম্বর প্রশ্নের পূর্ণমানের জন্য উপযুক্ত। প্রতিটি উত্তর তথ্যসমৃদ্ধ, বিশ্লেষণধর্মী ও সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে।


🟩 বড়ো প্রশ্নোত্তর (১–১০)

  1. ১. বাবরের ভারতে আগমনের কারণ ও তাৎপর্য লেখ।
    উত্তর: বাবর ছিলেন ফারগানা রাজ্যের শাসক এবং তিমুর ও চেঙ্গিস খানের বংশধর। তিনি ভারতে আগমন করেন ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে, মূলত দিল্লির সুলতান ইব্রাহিম লোধির দুর্বলতা ও উত্তর ভারতের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলতার সুযোগ নিয়ে। প্রথম পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লোধিকে পরাজিত করে তিনি দিল্লি দখল করেন এবং মোগল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন। এই বিজয় ভারতীয় ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে এবং ভবিষ্যতে মোগল শাসনের দীর্ঘ পথ প্রশস্ত করে।
  2. ২. হুমায়ুনের শাসনকাল ও তাঁর বিপত্তির কারণ বিশ্লেষণ করো।
    উত্তর: হুমায়ুন বাবরের মৃত্যুর পর ১৫৩০ সালে সিংহাসনে বসেন। কিন্তু প্রশাসনিক দুর্বলতা ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতার কারণে তিনি আফগান নেতা শের শাহ সুরির কাছে পরাজিত হন (চৌসার যুদ্ধ, ১৫৪০)। তাকে ভারত ছেড়ে পারস্যে আশ্রয় নিতে হয়। ১৫৫৫ সালে তিনি দিল্লি পুনর্দখল করেন কিন্তু পরবর্তী বছর দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। হুমায়ুনের ব্যর্থতার মূল কারণ ছিল – অনভিজ্ঞতা, দলীয় কোন্দল ও সুসংহত প্রশাসনের অভাব।
  3. ৩. আকবরের 'দীন-ই-ইলাহী' নীতি ও তার তাৎপর্য লেখ।
    উত্তর: সম্রাট আকবর ১৫৮২ সালে 'দীন-ই-ইলাহী' নামে একটি নতুন ধর্মীয় মতপ্রবর্তন করেন। এই মতের মূল লক্ষ্য ছিল ধর্মীয় সহনশীলতা ও মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠা। হিন্দু, মুসলিম, জৈন, খ্রিস্টান প্রভৃতি ধর্মের ভাল দিকগুলিকে একত্রিত করে এই ধর্ম গঠিত হয়। যদিও এর অনুসারী সংখ্যা কম ছিল, কিন্তু এটি আকবরের উদার ধর্মনীতি ও জাতিগত ঐক্যের প্রচেষ্টাকে প্রকাশ করে। এই নীতি মোগল শাসনে একটি সহিষ্ণু পরিবেশ গড়ে তোলে এবং সমাজে সম্প্রীতির বার্তা দেয়।
  4. ৪. আকবরের রাজস্ব ও সামরিক ব্যবস্থা ব্যাখ্যা করো।
    উত্তর: আকবর 'টোডরমল'-এর সহায়তায় 'দাহসালা পদ্ধতি' চালু করেন, যেখানে জমির উৎপাদন ও বাজারদরের ভিত্তিতে কর নির্ধারণ হতো। এই পদ্ধতি কৃষকদের জন্য সুবিধাজনক ছিল এবং রাজস্ব আদায়ে শৃঙ্খলা আসে। সামরিক দিক থেকে তিনি 'মনসবদারী প্রথা' প্রবর্তন করেন, যার মাধ্যমে সেনা ও অফিসারদের নির্দিষ্ট পদমর্যাদা ও দায়িত্ব নির্ধারিত হতো। মনসবদাররা কেন্দ্রীয় সেনা থেকে সৈন্য সংগ্রহ করতেন এবং তারা সরাসরি রাজকোষ থেকে বেতন পেতেন। এই দুটি ব্যবস্থা আকবরের প্রশাসনকে সংগঠিত ও কার্যকর করে তোলে।
  5. ৫. সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো।
    উত্তর: সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন ন্যায়বিচারপ্রিয় শাসক। তিনি 'ইনসাফের শৃঙ্খল' নামে একটি শৃঙ্খল স্থাপন করেন, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সরাসরি সম্রাটের কাছে অভিযোগ জানাতে পারত। এই ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত জনবান্ধব। এছাড়াও তিনি ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থাকে আলাদা করে প্রশাসনিক স্তরে উন্নয়ন করেন। সুবেদার ও কাজীরা ক্ষেত্রভিত্তিক বিচারকার্যে নিয়োজিত ছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর ছিলেন কঠোর। তাঁর ন্যায়নিষ্ঠ বিচারব্যবস্থা সাধারণ মানুষের আস্থার কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
  6. ৬. শাহজাহানের শিল্প ও স্থাপত্য অনুরাগের দৃষ্টান্ত দাও।
    উত্তর: শাহজাহান ছিলেন মোগল স্থাপত্যের স্বর্ণযুগের রূপকার। তিনি নির্মাণ করেন তাজমহল – যা বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম। এটি ছিল তাঁর স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতিসৌধ। এছাড়াও তিনি দিল্লির লালকেল্লা, জামা মসজিদ, আগ্রার মীনা বাজার প্রভৃতি স্থাপত্য নির্মাণ করেন। তাঁর আমলে মার্বেল ও জালি কারুকাজ, গম্বুজ ও মিনারের নান্দনিক স্থাপত্যরীতি জনপ্রিয় পায়। মোগল চিত্রশৈলী ও সংগীতেও তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা ছিল।
  7. ৭. আওরঙ্গজেবের ধর্মনীতি ও তার প্রভাব বিশ্লেষণ করো।
    উত্তর: আওরঙ্গজেব ছিলেন কট্টর সুন্নি মুসলমান। তিনি ধর্মীয় সহনশীলতার নীতিকে পরিত্যাগ করে জিজিয়া কর পুনরায় চালু করেন এবং বহু হিন্দু মন্দির ধ্বংসের আদেশ দেন। তার কট্টর নীতি রাজপুত, মারাঠা ও শিখদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। দীর্ঘকালীন যুদ্ধ ও ধর্মীয় দমন নীতির ফলে সাম্রাজ্য দুর্বল হয়। আওরঙ্গজেবের ধর্মনীতি সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দেয়, যা মোগল সাম্রাজ্যের পতনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
  8. ৮. মোগল যুগে সাহিত্য ও সংগীতের অগ্রগতি ব্যাখ্যা করো।
    উত্তর: মোগল যুগে সাহিত্য ও সংগীতে বিস্ময়কর উন্নয়ন ঘটে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শেরপুর: ইতিহাস ও বর্তমানের এক হৃদয়ছোঁয়া গল্প

শেরশাহবাদিয়া ভাষা: বাংলা ভাষার আঞ্চলিক রূপ না কি ভিন্ন একটি লোকভাষা?

সাবান। কোনটা কি ধরনের। সরকারি নির্দেশনামাতে সাবান সম্পর্কে কি বলা আছে জানতে পড়ুন...