ছায়া
ছায়া
✍️ লেখক: জোনাকি
১.
প্রাক্তন শিক্ষক দুলাল ঘোষ এখন আর পড়ান না। চোখে ছানি, শরীর নুয়ে এসেছে। একসময় পাড়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় গৃহশিক্ষক ছিলেন। ছাত্রদের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে, নিজেই তালিকা লিখে রাখতে হতো—কার কখন কোনদিন পড়তে আসবে।
আজ সেই তালিকা নেই। নেই সেই ছাত্ররাও।
২.
দুলালবাবুর বাড়িটা অল্প ভাঙাচোরা। পুরনো কাঠের তাকভর্তি বই—রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, ইতিহাস, ভূগোল, এবং তাঁর প্রিয় ‘আধুনিক বাংলা কবিতা’।
দেয়ালে টাঙানো কিছু পুরনো ফটো—যেখানে দাঁড়িয়ে আছে হেসে ওঠা ছাত্রছাত্রীরা। কারো নাম আজ আর মনে পড়ে না, কারো ছবি আজ ঝাপসা।
কিন্তু তবুও তিনি সন্ধ্যাবেলা কাঁথা গায়ে জড়িয়ে একটা খাতা নিয়ে বসে থাকেন জানালার পাশে। কোনো ছাত্র কি আজও আসবে? নাকি সবটাই... ছায়া?
৩.
একদিন হাট থেকে ফিরছিলেন, হঠাৎ একটা গাড়ি এসে থামে তাঁর পাশে।
একজন নামেন—ফরমাল ড্রেস, চোখে সানগ্লাস। “দুলাল স্যার? আমি পলাশ... ক্লাস সেভেনে পড়তাম আপনার কাছে।”
দুলালের চোখ জলে ভরে আসে। “তুই! তুই তো এখন বড় অফিসার।”
পলাশ হাসে। “স্যার, আজ আপনি না পড়ালে, আমি এই জায়গায় আসতাম না।”
কিছুক্ষণ পর গাড়ি চলে যায়। দুলালবাবু ফিরে আসেন ঘরে। স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন— “ছায়া বলে যা দেখি, তার মধ্যে কিছু আলো আজও থেকে যায়।”
৪.
বয়সের ভারে পা চলে না ঠিকমতো, তবুও তিনি প্রতিদিন রুটিন মতো উঠে পড়েন। ভাঙা রেডিওটা চালু করেন, চা তৈরি করেন, জানালার পাশে বসেন।
কারণ তাঁর জীবনে এখন একটাই চিত্র— ছায়া।
ছাত্রদের ছায়া, অতীতের ছায়া, সম্মানের ছায়া।
“সব আলো পৌঁছায় না সব ঘরে, কিছু ঘরে পড়ে কেবল ছায়া।”
লেখকের কথা:
এই গল্প বাংলার এক নিঃশব্দ শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে—যারা আলো তৈরির কারিগর, কিন্তু নিজেরা ছায়ার ভেতরেই হারিয়ে যান।
📚 আরও গল্প পড়ুন:
🔖 SEO Tags:
#banglagolpo #teacherstory #oldteacher #shadowlife #emotionalstory #unsunghero #bangladeshergolpo #jonakiwrites
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন