রুবাই (মুর্শিদাবাদ বিষয়ক) ৪ লাইনের কবিতা
৪১
জ্ঞানীর শহর, কবির গাঁ, শিল্পের ঘ্রাণ,
তবু গরিবের ঘর শুধু অভিমান।
ইতিহাস মুকুট, রাজা নামহীন,
নেতার হাতে ছিন্ন সোনার সামান।
৪২
লিচুর বাগান, আমে জোয়ার,
কাঁসার ঘরেতে ধুপের আচার।
তবু ছেলের মুখে রুটির অভাব,
বুক ফাটে তবুও মুখে নেই উচ্চার।
৪৩
মীরমদন, মোহনলালের জয়গাথা,
পলাশীর প্রান্তর ডাকে ইতিহাসা।
আজকে কিন্তু সেই জমিতে দাঁড়িয়ে,
বিক্রি হয় শ্রম, স্বপ্ন, আর ভাষা।
৪৪
চোখে ঘোরে মুর্শিদকুলীর প্রাসাদ,
অন্দরে শোনা যায় ভিখারীর স্নেহ-সাধ।
ছেঁড়া কাঁথায় গড়া রাজ্য যেন,
গৌরবের আড়ালে দারিদ্রের সাধ।
৪৫
বেলডাঙা হাসে সবজির হাটে,
নেই হাসি শ্রমিকের মলিন ঠোঁটে।
খাটে দিনভর, ঘুমায় আধভাতে,
মজুরের স্বপ্ন বোঝে না তো রথে।
৪৬
বুকের গহীনে গানে বাজে রব,
অরিজিৎ এসেছে এই ধূলিমাখা পথ।
তবু তার শহরে টান পড়ে লাশে,
নেই আলো, নেই প্রেম, কেবলই ব্যথা কত।
৪৭
মুর্শিদাবাদ ডাক্তার ফলায় অনেক,
তবু গ্রামে মরছে লোক বিনা চিকিৎসার কষাঘাতে।
ঘরে জন্মায় জ্ঞান, বাইরে অন্ধকার,
ব্যবস্থার ঘরে আজ লুটতরাজ আছে।
৪৮
শোলার শিল্পী মুখে দারিদ্র্যের রেখা,
তার হাতে উঠে ইতিহাসের লেখা।
তবু সরকার দেখেনা তার যন্ত্রণা,
শুধু মঞ্চে বাজে উন্নয়নের ঢেঁকা।
৪৯
খবরে উঠে না মায়ের বিষপান,
কিস্তির চাপে তার নিঃশেষ প্রাণ।
জেলা তো গর্বে বড় হয়ে ওঠে,
কিন্তু মর্যাদা খোঁজে সে এখনো গ্রাম।
৫০
ঐতিহ্যের শহর, মীরজাফরের গাঁ,
পাল্লায় মাপে সবাই শুধু তার ধাঁধাঁ।
গৌরব চাপা পড়ে কিছু নামধারীতে,
তবু হৃদয়ে বাঁধে এই মাটি আর চাঁদা।
৫১
নেমে আসে সন্ধ্যা রণক্ষেত্রের বুকে,
পলাশীর গাছ গুলি ঝরায় নীরবে সুখে।
শহীদদের কবর কেউ খোঁজে না আজ,
বাকি শুধু নাম আর টিকিটের মুখে।
৫২
মাটিতে রক্ত, ইতিহাসে গান,
তবু মীরজাফরের নামেই পরিচয় প্রাণ।
যার গদিতে চুরি আর মিথ্যার রাজ,
তারাই লিখে দেয় জেলার সম্মান।
৫৩
ছানাবড়ার স্বাদে জিতে গেছি কোথাও,
কিন্তু কিশোরের পেট খালি অনাহারে তাও।
জি আই ট্যাগ নেই জীবনের মানে,
জয়গান চলে, তবু দুঃখ যেন কাও।
৫৪
গুমানী দেওয়ান কাঁদে রূপসী নদী,
চারণ কবির গানেও এখন নিদ্রা ধরি।
শুধু সভায় বাজে তার নামের ধ্বনি,
গ্রামে নেই তবু তার কবিতার ঘ্রাণ-গন্ধি।
৫৫
জঙ্গীপুরের লিচু এখন বাইরের মাল,
কিনে নেয় কোম্পানি, বেচে লাভশাল।
চাষির হাতে নেই মুনাফার ছোঁয়া,
তাকে ঘিরে চলে শুধু কর্পোরেট জাল।
৫৬
মায়ের কাঁধে লোনের খাতা ভারি,
পড়েনি ইংরেজি, তবু সই দিয়েছে পাড়ি।
সপ্তাহে সপ্তাহে কিস্তির জ্বালায়,
ছেলের স্কুল ফিসও হয়ে উঠেছে ভারী।
৫৭
বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা ছেলেটি আজ,
রঙ মাখে বাড়ি, চালায় টোটোর সাজ।
স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হবার, হলো রাজমিস্ত্রি,
জীবনের মানে যেন হতাশার গাজ।
৫৮
রোজ সকালে পাড়ার চায়ের ঠেকে,
কিস্তির গল্পে মুখ গুমরে থাকে।
নেতা আসেনা, এমএলএও ব্যস্ত,
তবু পোস্টারে মুখ তাদের থমকে থাকে।
৫৯
নদী বাঁধে সুর, ব্যারেজে জোয়ার,
তবু পাড় ভাঙে, তলিয়ে যায় প্রহর।
ঐতিহাসিক মাটি আজ পলিময় শূন্য,
তাকে কেউ কাঁদে না, জানে না সরকার।
৬০
মুর্শিদাবাদ শুধু নাম নয়, এক ক্ষত,
মাঝে মাঝে উঠে আসে গর্বের সত্য।
তবু সারাদিন খেটে মরে যে জন,
তার নাম কেউ জানে না—এই তো ব্যথা।
ইনশাল্লাহ খান ইনশা – উর্দু সাহিত্যের নবপ্রভাত
১.
ইনশা ছিলেন কবি, পণ্ডিত, দরবেশ,
ফারসি-উর্দুর সেতু, ভাষার পেশ।
গদ্যের ভিত রচেন "রানজে ইনশা"-য়,
উর্দু পেল প্রাণ, ছুঁলো নব আবেশ।
২.
'দারি' ভাষার অন্তর থেকে তুলে নেন আলো,
উর্দুর ঘর বানান, শব্দে ঢালে ভালো।
রচনা তার হাস্য, প্রেম, দার্শনিকও,
ভাবনার পটে আঁকে রঙিন কালো।
৩.
রাখেননি সীমা শুধু মুঘল দরবারে,
সাহিত্য ছড়াল শহর গ্রামে দ্বারে।
উর্দু গদ্যের আদি যিনি গুরু,
তাঁর কলমেই ভাষা পেল উজারে।
দাদা ঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিত – ছন্দ ও কৌতুকের রসিক জনক
১.
বর্ণে বর্ণে ঘোরে বাক্যের ধারা,
পলিনড্রামে খেলে ছন্দের তারা।
“নব দাদা দান বন” – উল্টে-পাল্টেও,
সত্যি ছিল তাঁর ছড়ার কারা।
২.
ছোট ছোট কথায় সমাজের ব্যথা,
দাদার হাসিতে ছিল তীক্ষ্ণ কথা।
সত্য উগরে দিতেন কৌতুকে ছাপা,
রঙ্গের আড়ালে জাগাতেন ব্যথা।
৩.
শরৎচন্দ্র নাম, ঠাকুর তকমা,
কলকাতার হাটে উঠত রমরমা।
সাহিত্যে এনে দিলেন নতুন ছাঁচ,
পলিনড্রামে বাঁধা বাংলা মহাকাব্যরামা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন