অধ্যায় ১: ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চা✍️ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২ নম্বরভিত্তিক) – ৫০টি:
অধ্যায় ১: ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চা
1. ইতিহাস শব্দের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে?
— ইতিহাস শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘Historia’ থেকে, যার অর্থ অনুসন্ধান বা জ্ঞান অর্জন।
2. হেরোডোটাস কে ছিলেন?
— হেরোডোটাস ছিলেন প্রাচীন গ্রিক ঐতিহাসিক, যাকে "ইতিহাসের জনক" বলা হয়।
3. ইতিহাস কী?
— ইতিহাস হলো মানুষের অতীত জীবনের তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ ও রূপায়ণ।
4. ইতিহাসচর্চার প্রধান উদ্দেশ্য কী?
— অতীত জানা, বর্তমান বোঝা ও ভবিষ্যতের জন্য দিক নির্দেশ করা।
5. ইতিহাসকে বিজ্ঞান বলা যায় কেন?
— কারণ ইতিহাসে পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও প্রমাণনির্ভর তথ্য ব্যবহৃত হয়।
6. ইতিহাসকে শিল্প বলা হয় কেন?
— কারণ ইতিহাস উপস্থাপনের জন্য বর্ণনাশৈলী ও রচনাকৌশলের প্রয়োজন হয়।
7. প্রাথমিক উৎস কাকে বলে?
— প্রত্যক্ষভাবে ঘটনার সময় রচিত বা সংগৃহীত দলিল বা নিদর্শনকে প্রাথমিক উৎস বলে।
8. মাধ্যমিক উৎস কাকে বলে?
— কোনো ঘটনার পরবর্তী সময়ে তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক রচিত তথ্যকে মাধ্যমিক উৎস বলে।
9. Subaltern ইতিহাস কী?
— সাধারণ ও নিম্নবর্গের মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা ইতিহাসকে Subaltern ইতিহাস বলে।
10. ইতিহাসচর্চায় প্রত্নতত্ত্বের গুরুত্ব কী?
— প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মাধ্যমে সভ্যতা ও সংস্কৃতির তথ্য জানা যায়।
11. Epigraphy কাকে বলে?
— প্রাচীন শিলালিপি পাঠ ও বিশ্লেষণকেই Epigraphy বলে।
12. Numismatics কী?
— মুদ্রা নিয়ে গবেষণাকে Numismatics বলে, যা ইতিহাসের উৎস হিসেবে কাজ করে।
13. ঔপনিবেশিক ইতিহাস কী?
— উপনিবেশ স্থাপনকারী শক্তির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা ইতিহাসকে ঔপনিবেশিক ইতিহাস বলে।
14. জাতীয়তাবাদী ইতিহাস কী?
— জাতির আত্মপরিচয় ও গৌরব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে রচিত ইতিহাস জাতীয়তাবাদী ইতিহাস।
15. মার্ক্সবাদী ইতিহাস কী?
— শ্রেণিসংঘর্ষ ও অর্থনৈতিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে রচিত ইতিহাস মার্ক্সবাদী ইতিহাস।
16. ফেমিনিস্ট ইতিহাস কী?
— ইতিহাসে নারীদের ভূমিকা, অধিকার ও অবদানের ওপর গুরুত্ব দেওয়া ইতিহাস।
17. উৎস সমালোচনা কাকে বলে?
— উৎসের সত্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করার প্রক্রিয়াই উৎস সমালোচনা।
18. ইতিহাসে বস্তুনিষ্ঠতা বলতে কী বোঝায়?
— নিরপেক্ষভাবে তথ্য উপস্থাপন করাই ইতিহাসে বস্তুনিষ্ঠতা।
19. ইতিহাস লেখার সময় কোন বিষয়গুলি বিবেচ্য?
— উৎসের সত্যতা, কালক্রম, নিরপেক্ষতা ও বিশ্লেষণধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি।
20. আখ্যানভিত্তিক ইতিহাস কাকে বলে?
— যেখানে গল্পের আকারে ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণিত হয় তাকে আখ্যানভিত্তিক ইতিহাস বলে।
21. ইতিহাস ও পুরাণের মধ্যে পার্থক্য কী?
— ইতিহাস সত্যনিষ্ঠ ও প্রমাণনির্ভর; পুরাণ অলৌকিক ও ধর্মীয় গল্পনির্ভর।
22. পূর্বে ইতিহাস কার জন্য লেখা হতো?
— রাজা-রাজড়াদের গুণগান ও বিজয়কথা রচনার জন্য।
23. আধুনিক ইতিহাসচর্চার নতুন প্রবণতা কী?
— সাধারণ মানুষ, নারী ও পরিবেশ কেন্দ্রিক ইতিহাসচর্চা।
24. ভারতে ইতিহাসচর্চার শুরু কোথা থেকে?
— ব্রিটিশ শাসনকালে আধুনিক পদ্ধতিতে ইতিহাসচর্চা শুরু হয়।
25. সাহিত্যিক উৎস কীভাবে ইতিহাসে সাহায্য করে?
— সাহিত্যে সময়ের সমাজ, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রতিফলন পাওয়া যায়।
26. ইতিহাস কি পুনরাবৃত্ত হয়?
— না, তবে কিছু ঘটনার মিল দেখা যায়।
27. উৎস বিশ্লেষণের প্রধান ধাপ কী?
— তথ্য সংগ্রহ, যাচাই, তুলনা ও উপসংহার তৈরি।
28. ইতিহাস কি কল্পনাভিত্তিক বিষয়?
— না, ইতিহাস প্রমাণনির্ভর বাস্তব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে।
29. Subaltern Studies কারা শুরু করেন?
— রণজিৎ গুহ সহ একদল ভারতীয় ঐতিহাসিক।
30. ইতিহাসের প্রধান উৎসগুলি কী কী?
— প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, শিলালিপি, সাহিত্য, মুদ্রা ও দলিলপত্র।
ইতিহাসচর্চায় নৃবিজ্ঞানের গুরুত্ব আলোচনা করো।
ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞান—এই দুই শাস্ত্র পরস্পর নির্ভরশীল। নৃবিজ্ঞান মানবসমাজের উৎপত্তি, বিকাশ, আচার, সংস্কৃতি, ভাষা ইত্যাদি অধ্যয়ন করে। ইতিহাসচর্চায় নৃবিজ্ঞানের সাহায্যে সেইসব সমাজ ও গোষ্ঠীর ইতিহাস জানা যায়, যাদের নিজস্ব লিখিত ভাষা বা নথিভিত্তিক দলিল নেই।
প্রথমত, আদিম সমাজ ও উপজাতিদের ইতিহাস গঠনে নৃবিজ্ঞান অপরিহার্য। যেমন—আন্দামানের জারোয়া জাতির আচার-আচরণ, পোষাক, খাদ্যাভ্যাস, যাপনপদ্ধতি নৃবিজ্ঞান দ্বারা জানা সম্ভব, যেগুলি ঐতিহাসিকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয়ত, নৃবিজ্ঞান লোকসংস্কৃতি, সামাজিক রীতিনীতি, ধর্মীয় বিশ্বাস, পরিবার কাঠামো বিশ্লেষণ করে। এগুলির মাধ্যমে ইতিহাসবিদরা সমাজের গভীরতর ব্যাখ্যা পান, যা শুধুমাত্র রাজনৈতিক তথ্য দিয়ে সম্ভব নয়।
তৃতীয়ত, ইতিহাসের যে অংশে প্রাথমিক উৎসের অভাব, সেখানে নৃবিজ্ঞানের পর্যবেক্ষণভিত্তিক পদ্ধতি অতীত পুনর্গঠনে সহায়তা করে। এছাড়া নৃবিজ্ঞানীরা প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানও বিশ্লেষণ করেন, যা ইতিহাসের তথ্য যাচাইয়ে উপযোগী।
বর্তমানে ইতিহাসচর্চা কেবল রাজাদের কাহিনি নয়, বরং সাধারণ মানুষের ইতিহাস। নৃবিজ্ঞান সেই সাধারণ, অবলিখিত গোষ্ঠীর জীবনচিত্র ইতিহাসে তুলে আনে।
সারসংক্ষেপে, ইতিহাসচর্চায় নৃবিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শাস্ত্র, যা ইতিহাসকে বৈচিত্র্যময়, মানবিক ও সমাজমুখী করে তোলে।
---
৩১. ইতিহাসবিদদের প্রধান কাজ কী?
উত্তর: ইতিহাসবিদদের প্রধান কাজ হল প্রাপ্ত তথ্য, দলিল ও প্রমাণ বিশ্লেষণ করে অতীতের একটি বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ তৈরি করা।
---
৩২. ‘নতুন ইতিহাস’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ‘নতুন ইতিহাস’ বলতে সেই ধরনের ইতিহাস বোঝায় যেখানে সমাজের সাধারণ মানুষের জীবন, সংস্কৃতি ও সংগ্রামকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
---
৩৩. ইতিহাস কাদের জন্য লেখা উচিত?
উত্তর: ইতিহাস কেবল রাজা-বাদশাহদের জন্য নয়, বরং সাধারণ জনগণের অভিজ্ঞতা ও জীবনচিত্র তুলে ধরার জন্য লেখা উচিত।
---
৩৪. ইতিহাস কীভাবে মানুষের পরিচয়ের ভিত্তি গড়ে তোলে?
উত্তর: ইতিহাস ব্যক্তি ও সমাজের অতীত জানায়, ফলে মানুষ তার সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও জাতিগত পরিচয় খুঁজে পায়।
---
৩৫. প্রত্নতত্ত্বের প্রধান কাজ কী?
উত্তর: প্রত্নতত্ত্বের প্রধান কাজ হল অতীতের বস্তু, স্থাপত্য ও নিদর্শনের মাধ্যমে ইতিহাস পুনর্গঠন করা।
---
৩৬. ইতিহাসের সঙ্গে ভূগোলের সম্পর্ক কী?
উত্তর: ভূগোলের সাহায্যে ইতিহাসবিদরা নির্দিষ্ট ঘটনার স্থান, জলবায়ু ও পরিবেশ বিশ্লেষণ করতে পারেন, যা ঐতিহাসিক ব্যাখ্যায় সহায়ক।
---
৩৭. মৌখিক ইতিহাস কাকে বলে?
উত্তর: মৌখিক ইতিহাস হল এমন ইতিহাস, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মের মধ্যে মুখে মুখে প্রচলিত থেকে যায়, যেমন লোককথা ও স্মৃতিকথা।
---
৩৮. ইতিহাসচর্চায় লোকসাহিত্যের গুরুত্ব কী?
উত্তর: লোকসাহিত্য অতীত সমাজের ধর্ম, সংস্কৃতি ও জীবনের অন্তর্দৃষ্টি দেয়, যা ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
---
৩৯. অর্থনৈতিক ইতিহাস বলতে কী বোঝো?
উত্তর: অর্থনৈতিক ইতিহাস হল সেই শাখা, যা উৎপাদন, বাণিজ্য, কর ব্যবস্থা, মজুরি, সম্পদ বণ্টন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে ইতিহাস ব্যাখ্যা করে।
---
৪০. ‘উপনিবেশ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘উপনিবেশ’ হল এমন এক অঞ্চল, যা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অন্য দেশের শাসনের অধীন থাকে।
---
৪১. ইতিহাসের সঙ্গে জীববিজ্ঞানের সম্পর্ক কোথায়?
উত্তর: জীববিজ্ঞানের সাহায্যে প্রাচীনকালে মানুষের খাদ্যাভ্যাস, রোগ, জীবনযাত্রা ইত্যাদি জানা যায়।
---
৪২. প্রত্নবস্তু কী?
উত্তর: প্রত্নবস্তু হল অতীত সভ্যতার নিদর্শন, যেমন মুদ্রা, মৃৎপাত্র, অস্ত্র, অলঙ্কার ইত্যাদি।
---
৪৩. ইতিহাসচর্চায় পরিসংখ্যানের গুরুত্ব কী?
উত্তর: পরিসংখ্যান বিভিন্ন সংখ্যাতাত্ত্বিক তথ্য বিশ্লেষণ করে ইতিহাসকে আরও নির্ভরযোগ্য করে তোলে।
---
৪৪. শিলালিপি কী?
উত্তর: শিলালিপি হল পাথরে খোদাই করা প্রাচীন লিখিত বার্তা, যা ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
---
৪৫. ইতিহাস কেন চর্চা করা উচিত?
উত্তর: ইতিহাস চর্চা করলে মানুষ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ গঠনে সচেতন হতে পারে।
---
৪৬. লিপি কী?
উত্তর: লিপি হল ভাষা লেখার এক নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা চিহ্নের ধারাবাহিক ব্যবহার।
---
৪৭. সাহিত্যের মাধ্যমে ইতিহাস কীভাবে জানা যায়?
উত্তর: সাহিত্য সমাজের চিন্তাধারা, মূল্যবোধ, জীবনধারা ও সংস্কৃতির পরিচয় দেয়, যা ইতিহাস নির্মাণে সহায়ক।
---
৪৮. ইতিহাসের কোন শাখাকে ‘সাংস্কৃতিক ইতিহাস’ বলা হয়?
উত্তর: যেখানে শিল্প, স্থাপত্য, সাহিত্য, ধর্ম, নৃত্য ইত্যাদি বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়, তাকেই সাংস্কৃতিক ইতিহাস বলা হয়।
---
৪৯. ইতিহাসবিদ কিভাবে তথ্য যাচাই করেন?
উত্তর: ইতিহাসবিদ তথ্য যাচাই করতে প্রাথমিক ও গৌণ উৎস বিশ্লেষণ, তুলনামূলক পাঠ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ব্যবহার করেন।
---
৫০. ইতিহাসচর্চায় কাল নির্ধারণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: কাল নির্ধারণ করলে ঘটনার সঠিক সময় ও ধারাবাহিকতা বোঝা যায়, যা ইতিহাস রচনায় সহায়ক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন