ফেসক্রিমের মান - ধরন ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ভারতের বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফেসক্রিম পাওয়া যায়, যা ত্বকের যত্নের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। এই পণ্যগুলি সরকারের নির্ধারিত মান ও নিয়মাবলীর অধীনে তৈরি ও বাজারজাত করা হয়। নিচে ফেসক্রিমের ধরন, সরকারি মানদণ্ড এবং জনপ্রিয় ব্র্যান্ডসমূহের তালিকা প্রদান করা হলো।
---
🧴 ফেসক্রিমের ধরন
ভারতের বাজারে নিম্নলিখিত ধরনের ফেসক্রিম পাওয়া যায়:
1. ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম – ত্বককে আর্দ্র রাখে।
2. ভ্যানিশিং ক্রিম – ত্বকে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে।
3. কোল্ড ক্রিম – শীতকালে ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে।
4. ক্লিনজিং ক্রিম – ত্বক পরিষ্কারে সহায়তা করে।
5. সানস্ক্রিন ক্রিম – সূর্যের UV রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
6. অ্যান্টি-এজিং ক্রিম – বয়সের ছাপ কমাতে সহায়তা করে।
7. স্কিন লাইটেনিং/ফেয়ারনেস ক্রিম – ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।
🏛️ সরকারি মান ও নিয়মাবলী
ভারতে ফেসক্রিমসহ সকল কসমেটিক পণ্য নিম্নলিখিত আইন ও নিয়মাবলীর অধীনে নিয়ন্ত্রিত হয়:
Drugs and Cosmetics Act, 1940 এবং Cosmetics Rules, 2020: এই আইন অনুযায়ী, সকল কসমেটিক পণ্য উৎপাদন ও আমদানির পূর্বে নির্ধারিত মান পূরণ করতে হবে।
Bureau of Indian Standards (BIS): BIS বিভিন্ন কসমেটিক পণ্যের জন্য মান নির্ধারণ করে। ফেসক্রিমের জন্য প্রযোজ্য মান হলো IS 6608:2004, যা পণ্যের গুণগত মান, pH মান, মাইক্রোবায়োলজিক্যাল সীমা এবং লেবেলিং সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান করে।
Central Drugs Standard Control Organization (CDSCO): এই সংস্থা কসমেটিক পণ্যের আমদানির জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া পরিচালনা করে এবং পণ্যের নিরাপত্তা ও গুণগত মান নিশ্চিত করে।
🏷️ জনপ্রিয় ফেসক্রিম ব্র্যান্ডসমূহ
ভারতের বাজারে কিছু জনপ্রিয় ফেসক্রিম ব্র্যান্ড নিম্নরূপ:
ব্র্যান্ড নাম বৈশিষ্ট্য ও পণ্যসমূহ
Glow & Lovely পূর্বে Fair & Lovely নামে পরিচিত; ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।
Lakmé বিভিন্ন ধরনের স্কিন কেয়ার ও মেকআপ পণ্য সরবরাহ করে।
Emami Fair and Handsome, BoroPlus ইত্যাদি পণ্য সরবরাহ করে।
Vicco আয়ুর্বেদিক উপাদানে তৈরি Vicco Turmeric Cream ইত্যাদি পণ্য সরবরাহ করে।
Dove ত্বক ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেশন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
Vaseline ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং শুষ্কতা প্রতিরোধ করে।
Parachute ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি পণ্য সরবরাহ করে।
---
ক্রেতাদের জন্য পরামর্শ
লেবেল পড়ুন: পণ্যের উপাদান, উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, এবং প্রস্তুতকারকের তথ্য যাচাই করুন।
BIS চিহ্ন খুঁজুন: পণ্যে BIS চিহ্ন থাকলে তা মানসম্পন্ন হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী পণ্য নির্বাচন করুন: আপনার ত্বকের ধরন (শুষ্ক, তৈলাক্ত, সংবেদনশীল) অনুযায়ী উপযুক্ত ফেসক্রিম নির্বাচন করুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: ত্বকে সমস্যা দেখা দিলে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
ফেসক্রিম ব্যবহারে ত্বক কি ফর্সা হয়?
না, ফেসক্রিম ব্যবহারে প্রকৃত অর্থে ত্বক "ফর্সা" হয় না।
তবে কিছু ফেসক্রিম ত্বকের উপরিভাগে ময়লা, তেল, মৃত কোষ সরিয়ে চেহারাকে সাময়িকভাবে উজ্জ্বল বা পরিষ্কার দেখাতে পারে। এগুলো ত্বকের "glow" বা উজ্জ্বলতা বাড়ায়, কিন্তু চর্মের স্বাভাবিক বর্ণ (melanin স্তর) পরিবর্তন করতে পারে না।
ফেয়ারনেস বা স্কিন-লাইটেনিং ক্রিমে অনেক সময় থাকে:
Hydroquinone
Steroid
Mercury compounds (কখনো অবৈধভাবে)
এগুলো সাময়িকভাবে মেলানিন উৎপাদন কমিয়ে ত্বককে ফর্সা দেখাতে পারে, কিন্তু তা স্থায়ী নয় এবং অনেক সময় বিপজ্জনক।
---
⚠️ ফেসক্রিম ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side Effects):
নিম্নমানের বা ভুলভাবে ব্যবহৃত ফেসক্রিমে দেখা যেতে পারে:
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা
এলার্জি চুলকানি, লালচে ভাব, ফুসকুড়ি
ব্রণ বৃদ্ধি তৈলাক্ত উপাদানে ব্রণ হতে পারে
ত্বক পাতলা হওয়া স্টেরয়েডযুক্ত ক্রিমে
সংক্রমণ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল না হলে জীবাণু প্রবেশ
হাইপারপিগমেন্টেশন ব্যবহারের পর রোদে গেলে দাগ হতে পারে
হরমোন সমস্যা স্টেরয়েড দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ক্ষতি করে
---
🚫 চুলকানির মলম ফর্সা হওয়ার জন্য ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক:
বাজারে পাওয়া যেমন: Betnovate-N, Quadriderm, Tenovate, Lobate-GM ইত্যাদি চুলকানির মলম (অ্যান্টিফাঙ্গাল বা স্টেরয়েডযুক্ত) অনেকেই ভুল করে ত্বক ফর্সা করতে মাখেন।
এগুলোতে থাকে:
Betamethasone (Steroid)
Clotrimazole (Antifungal)
Gentamicin (Antibiotic)
➡️ এই ধরণের মলম ফর্সা করে না, বরং স্থায়ী ক্ষতি করে:
ক্ষতি ব্যাখ্যা
ত্বক পাতলা হয়ে যায় সহজে ছিঁড়ে যায় বা রক্ত পড়ে যায়
মুখে লালচে দাগ পড়ে স্টেরয়েড-জনিত র্যাশ
মুখে ছোট ছোট ব্রণ হয় "steroid acne" বলে পরিচিত
মুখের চামড়া কালচে হয়ে যায় rebound pigmentation
ফাঙ্গাল সংক্রমণ হয় ইমিউনিটি কমে যায়
👉 ডাক্তার ব্যতীত এই ধরণের মলম মুখে ব্যবহার অত্যন্ত বিপজ্জনক।
---
✅ উপদেশ:
1. ত্বক ফর্সা নয়, স্বাস্থ্যবান রাখাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
2. ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
3. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো স্টেরয়েড বা অ্যান্টিফাঙ্গাল মলম মুখে মাখবেন না।
4. যদি আপনি ত্বকে দাগ বা কালচে ভাব নিয়ে চিন্তিত হন, একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
বিস্তারিত জানতে পড়ুন সরকারি ওয়েবসাইটে
https://consumeraffairs.nic.in/comparativetestbyconsumersa/fairness-cream
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন