রুবাই ( মুর্শিদাবাদ বিষয়ক ) চার লাইনের কবিতা ১১-২০
১১
মাটি বলে, “আমার কোলে জন্মেছে বীর”,
তবু ইতিহাস খোঁজে কেবল বিশ্বাসঘাতক মীর।
চোখের সামনে মুছে যায় হাজারো শ্রমিকের নাম,
সম্মান পায় না যারা দেয় দেশের জন্য প্রাণ।
১২
হাতের কাজ ফুটে ওঠে কাঁসা-পিতলের ছাপে,
তবু কেন বেঁচে থাকে শুধু হাটে ধুলোর মাপে?
বিপণি খুলে শোক বলে, “আমার শিল্প মরেছে”,
অর্থ খোঁজে বিদেশে, শিকড় ভুলে গেছে।
১৩
শোলার প্রতিমা গড়ে মায়ের রূপ,
তবু শিল্পীর কপালে নেই রুটি বা ভূপ।
সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়ায় শুধু মিউজিয়ামে,
জীবন কাঁদে চুপিচুপি প্রতিদিনই গ্রামে।
১৪
পথে পথে ছেলেরা হাঁটে শ্রমিক সাজে,
বুকে লুকানো স্বপ্ন, চোখে শুধু কাঁদে।
তাদের কেউ ভাবে না, কেউ খোঁজে না খবর,
জন্ম যার এই মাটিতে, ভবিষ্যত আজ ছায়া ঘোর।
১৫
ফিরে চায় শহর, তার গৌরব খোঁজে,
তবু রোজগার পায় না কেউ স্বপ্নের বোজে।
যারা থাকতো কুঠিতে, আজ রাজ্য চালায়,
মাটির সন্তান রাজমিস্ত্রি হয়ে বিদেশে পালায়।
১৬
বেলডাঙার হাটে হাসে কুমড়ো, বেগুন, লাউ,
তবু কৃষক পায় না ন্যায্য দাম, শুধু চাও আর দাও।
হাটের ডাকের মাঝে শুনি এক নীরব দীর্ঘশ্বাস,
এই কি উন্নয়ন? এই কি সভ্যতার আশ্বাস?
১৭
কোনদিন হয়তো হবে নতুন এক সকাল,
মুর্শিদাবাদ জেগে উঠবে, পাবে তার কায়াল।
কিন্তু তার আগে চাই একটুখানি শ্রদ্ধা,
অতীতের আলোতে গড়া বর্তমানের সিদ্ধান্ত।
১৮
অরিজিৎ গাইছে দেশের নাম, গর্বে বুক ফুলে,
কিন্তু তার পাশের গ্রামে নল নেই কূলেতে।
সংগীত আর শূন্য পেটের মাঝে এক দেয়াল,
যার নাম — উন্নয়ন! বাস্তবে শুধু কাল।
১৯
পুস্তকের পাতায় আছে পলাশীর নাম,
তবু কি জানে শিশু, কারা দিয়েছিল প্রাণ?
মোহনলাল-মীরমদন আজ স্মৃতির ভার,
আর ইতিহাস লেখে যারা বিকিয়েছে চর।
২০
নবারুণ লিখেছিল 'ভয়ংকর সুন্দর',
কিন্তু শহর আজ ভয় আর অভাবে বন্ধুর।
সব্জির মতো বিকোয় জীবন, সস্তায় হাটে,
তবু ভদ্রলোক দেখে না, সে হাসে চুপিচাপে।
ক্রমশ.....
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন