ইচ্ছা গল্প (পর্ব -১০)
ইচ্ছা – দশম পর্ব
সমাজ, সম্পর্ক আর আত্মসংঘাতের এক বাস্তবমুখী কাহিনি
ভূমিকা:
পূর্ববর্তী পর্বে আমরা দেখেছিলাম আদর কেমনভাবে সমাজের চাপে, নিজের মা ও স্ত্রীর মাঝে দ্বিধান্বিত অবস্থানে রয়েছে। এবার দেখি, সম্পর্কের ভার আর অপমানের ফিসফাসের মাঝে সে কেমন করে নিজের বোনের সন্তানের দায়িত্ব নিচ্ছে, আবার হারাচ্ছে তার আপনজনদের।
আলো-আঁধারির মোড়ে
কলকাতার ব্যস্ত শহর, হাজার আলোর ভিড়ে আদর একা। নিজের জীবনের একাধিক অধ্যায়ের ফাঁকে সে যেন হারিয়ে যাচ্ছে—মা, স্ত্রী, সমাজ, কটুকথা আর নিজের অপরাধবোধের মধ্যে দোল খাচ্ছে তার জীবন।
ইচ্ছা ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই সব কিছু সহ্য করে যাচ্ছেন। বারবার খবর পান পাড়াপড়শির কাছ থেকে, “তোমার ছেলে তো আজকাল কলকাতায় রীতিমত লাটসাহেব হয়েছে!”
হিয়ার মুখ ভার। আদরের ফোনে কথা কমেছে। আদরের মন খারাপ দেখেও সে কিছু বলতে সাহস পায় না। মা-ছেলে, স্বামী-স্ত্রী—সব সম্পর্ক যেন নিঃশব্দ, শুধু কর্তব্যের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে।
গোপন সাহায্য ও সমাজের চোখ
এই সময়েই গল্পে আসে এক নতুন মোড়। আদরের আগের পক্ষের বোন রেজিনা, বহুদিন যোগাযোগ ছিল না, কিন্তু একদিন হঠাৎ ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে জানায়, তার স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, তার এক বছরের মেয়ে আর সে একেবারে নিরুপায়।
আদর কিছু বলে না, কিন্তু মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। হিয়া ও মা-কে কিছু না জানিয়ে সে প্রতি মাসে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে থাকে বোন রেজিনার নম্বরে।
গ্রামে আবার কানাঘুষো শুরু—
“আদর না কি এক হারামি মেয়ের বাচ্চার দায় নিচ্ছে!”
“মায়ের থেকে তো ছেলে কিছু শিখেইনি!”
এই খবর ফের হিয়ার কানে যায়। মা ইচ্ছাও জানে, ছেলের মধ্যে কিছু লুকোনো চলছে, কিন্তু বলেন না কিছু।
বাড়ির অশান্তি ও আত্মত্যাগ
হিয়া একদিন জিজ্ঞেস করে, “তুই কি আমাদের সংসার ছেড়ে অন্য কোথাও পরিবার তৈরি করছিস?”
আদর জবাব দিতে পারে না। শুধু বলে, “আমি চাই না, ওই ছোট্ট মেয়েটা আমার মতো বড় হোক—অভাব আর অবহেলার মধ্যে।”
তাদের সম্পর্কের ভিতরে ক্রমে জমে ওঠে অতলান্ত দূরত্ব। এখন আর ভালোবাসা থাকে না, শুধু দায় আর অভিমান।
আলো কি ফিরবে?
একদিন আদর বাড়ি আসে। বোনের ছোট্ট মেয়েটিকে দেখে মায়ের সামনে কিছু না বলে কোলে নিয়ে খেলে। তার চোখে যেন এক স্বপ্ন—এই শিশু অন্তত মুক্ত হোক।
মা ইচ্ছা একদিন ছেলেকে বলেন, “তুই যদি ভুল করে থাকিস, আমি তোকে ক্ষমা করব। কিন্তু আমাকে অন্ধকারে রাখিস না।”
আদরের বুকের ভেতর পাথরের মতো ভার জমে। এই সমাজ কাউকে ছাড়ে না—ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, আত্মত্যাগ—সবই প্রশ্নবিদ্ধ।
একদিন চুপিচুপি খেলার মাঠে মেয়েটির সাথে যায়, হেসে ওঠে সে। আদরের চোখে জল আসে।
সে ভাবে, “এইটুকু হাসির জন্যই তো আমি এত দূর এসেছি।”
তবুও, হাসির পিছনে থাকে এক বিষণ্ণ ছায়া—আসক্তি, গ্লানি, আত্মপ্রবঞ্চনা।
🔗 পূর্ববর্তী পর্ব পড়ুন: ইচ্ছা – নবম পর্ব
📌 পরবর্তী পর্বে আসছে: হিয়ার মানসিক ভাঙন, ইচ্ছার অসুস্থতা, ও আদরের আসক্তির চূড়ান্ত বিপর্যয়…
আপনার মতামত বা মন্তব্য নিচে জানাতে ভুলবেন না। পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।
#বাংলা_গল্প #জীবনের_গল্প #ইচ্ছা_সিরিজ #সম্পর্কের_সংঘাত #পারিবারিক_গল্প
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন