ইচ্ছা পর্ব -১
: ইচ্ছা (পর্ব - ১)
পাথরঘাটা গ্রামের শেষ প্রান্তে কুঁড়েঘরটার জানালা দিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় সূর্যটা যেন একটু বেশিই লজ্জা পায়। সেই জানালার পাশে বসে থাকে ইচ্ছা। বয়স মাত্র ষোলো, অথচ চোখে যেন তিরিশ বছরের ক্লান্তি।
ইচ্ছার জন্ম হয়েছিল ভালোবাসার ঘরে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান, গ্রামের মানুষজন আদরে "ইচ্ছা" নামটাই রেখেছিল। কিন্তু সুখ বেশি দিন থাকেনা গরিবের ঘরে। জন্মের মাত্র দুই বছর পরেই তার বাবা খলিল মিয়া মারা যান—হঠাৎ জ্বরে। মা রাবেয়া বেঁচে ছিলেন আরও কিছুদিন, কিন্তু অভাবের যন্ত্রণা, মানুষের কথা, এবং জীবনের বোঝা টেনে টেনে একদিন থেমে গেলেন তিনিও।
এরপর ইচ্ছার ঠাঁই হয় মাসীর বাড়িতে। মাসী, মোছাম্মত জোহরা খাতুন, নিজের তিন সন্তান নিয়েই হিমশিম খান। তার ওপর এক বোঝা এসে পড়ে হঠাৎ। যদিও মুখে কিছু বলেন না, চোখের ভাষা সব বলে দেয়—ইচ্ছা বোঝে।
পনেরো বছর বয়সে, একদিন বিকেলবেলা মাসী ডেকে বলে, “বুঝিসই তো মেয়ে, পেট চালাইতে কষ্ট হয়। ভাল হইবো তোর জন্যও… কাল বিয়া।”
ইচ্ছা কিছু বোঝার আগেই তার বিয়ে হয়ে যায় চাচার বন্ধু মালেকের সাথে—চল্লিশ পার করা, মুখে মদের গন্ধ, আগেই দুই সন্তানের বাবা। ছয় মাসের দাম্পত্যে সে বুঝে ফেলে, সংসার নামের দোতলা ঘরটার দরজা তার জন্য নয়। দিনের পর দিন নির্যাতন, রাতে অশ্রাব্য ভাষা, কখনো শারীরিক অত্যাচার—শেষমেশ একদিন মালেক নিজেই বলে, “চলে যা! তোর মতো মেয়েরে আমি আর রাখতে পারুম না।”
এক বছর পরে, ইচ্ছার কোলজুড়ে আসে তার পুত্র—আদর। মা ছাড়া কেউ ছিল না তার পাশে, এবং সেই আদরের মাঝে সে খুঁজে পায় নতুন জীবন, নতুন ইচ্ছা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন