ইসলামিক মতে পুরুষ ও মহিলা পোশাকের বিধান এবং হিজাব বুরখা কি বাধ্যতামুলুক
ইসলামিক মতে পুরুষ ও মহিলার পোশাকের বিধান কুরআন, হাদিস এবং ইসলামি শরিয়াহর নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। এই বিধানগুলোর উদ্দেশ্য হলো লজ্জাস্থান ঢাকা, শালীনতা বজায় রাখা এবং সমাজে পবিত্রতা ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করা। নিচে পুরুষ ও মহিলার পোশাকের বিধান সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো:পুরুষের পোশাকের বিধানলজ্জাস্থান ঢাকা (সতর): পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ ঢেকে রাখা ফরজ। এটি ন্যূনতম সীমা, তবে শালীনতার জন্য এর চেয়ে বেশি ঢাকা উত্তম।শালীন পোশাক: পোশাক এমন হওয়া উচিত যা শরীরের গঠন প্রকাশ না করে এবং যা সমাজে শালীন ও সম্মানজনক বলে গণ্য হয়। টাইট বা স্বচ্ছ পোশাক পরা নিষিদ্ধ।নারীসুলভ পোশাক নিষিদ্ধ: পুরুষের জন্য নারীদের পোশাক বা তাদের স্টাইল অনুকরণ করা হারাম। (হাদিস: সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৮৮৫)বিলাসিতা ও অহংকার এড়ানো: পোশাক অহংকার বা বিলাসিতা প্রকাশ করবে না। সোনার গহনা বা খাঁটি রেশমের পোশাক পুরুষের জন্য হারাম। (হাদিস: সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২০৬৯)পরিচ্ছন্নতা: পোশাক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাধারণ হওয়া উচিত। জুমার নামাজের জন্য উত্তম পোশাক পরার নির্দেশ রয়েছে। (সূরা আরাফ: ৩১)মহিলার পোশাকের বিধানপর্দা (হিজাব): মহিলার জন্য পুরো শরীর ঢেকে এমন পোশাক পরা ফরজ, যা শুধু মুখ, হাত ও পা (কিছু মাযহাব অনুযায়ী) বাদ দিয়ে শরীরের গঠন প্রকাশ না করে। (সূরা নূর: ৩১, সূরা আহজাব: ৫৯)শালীনতা: পোশাক ঢিলেঢালা, অস্বচ্ছ এবং শরীরের গঠন প্রকাশ না করা হওয়া উচিত। টাইট, স্বচ্ছ বা আকর্ষণীয় পোশাক পরা নিষিদ্ধ।মুখ ও হাতের ব্যাপারে মতভেদ: হানাফি ও মালিকি মাযহাব অনুযায়ী মুখ ও হাত ঢাকা জরুরি নয়, তবে শাফিঈ ও হাম্বলি মাযহাবে নেকাব (মুখ ঢাকা) ফরজ মনে করা হয়। তবে সবাই একমত যে, ফিতনার আশঙ্কা থাকলে মুখ ঢাকা উত্তম।পুরুষের অনুকরণ নিষিদ্ধ: মহিলার জন্য পুরুষদের পোশাক বা তাদের স্টাইল অনুকরণ করা হারাম। (হাদিস: সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৮৮৫)সুগন্ধি ও অলংকার: নামাহরাম পুরুষের সামনে সুগন্ধি বা অতিরিক্ত সৌন্দর্য প্রকাশকারী অলংকার ব্যবহার নিষিদ্ধ। (সূরা নূর: ৩১)বাইরে হিজাব: মহিলার জন্য বাইরে বের হওয়ার সময় হিজাব বা জিলবাব (বড় চাদরের মতো পোশাক) পরা বাধ্যতামূলক। (সূরা আহজাব: ৫৯)সাধারণ নির্দেশনাপোশাক সংস্কৃতি ও স্থানীয় রীতিনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে, যতক্ষণ তা শরিয়াহর সীমার মধ্যে থাকে।পোশাকের উদ্দেশ্য হলো শালীনতা, নম্রতা ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা।পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই পরিচ্ছন্নতা ও শালীনতা গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলামিক মতে হিজাব ও নেকাব (মুখ ঢাকা বা বোরখা) বাধ্যতামূলক কিনা, এই বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। নিচে বিষয়টি সংক্ষেপে এবং স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:হিজাব (শরীর ঢাকা):কুরআন ও হাদিসের ভিত্তি: কুরআনে সূরা নূর (২৪:৩১) এবং সূরা আহজাব (৩৩:৫৯) এ মহিলাদের জন্য শালীন পোশাক পরা এবং শরীর ঢেকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জিলবাব (বড় চাদর বা ঢিলেঢালা পোশাক) পরার কথা বলা হয়েছে, যা শরীরের গঠন প্রকাশ না করে।আলেমদের ঐকমত্য: বেশিরভাগ ইসলামি আলেম (হানাফি, শাফিঈ, মালিকি, হাম্বলি) একমত যে, মহিলার জন্য নাভি থেকে হাঁটু ব্যতীত পুরো শরীর ঢেকে রাখা ফরজ। এর মধ্যে মাথার চুল ঢাকার জন্য ওড়না বা স্কার্ফ (হিজাব) বাধ্যতামূলক। পোশাক অবশ্যই ঢিলেঢালা, অস্বচ্ছ এবং শালীন হতে হবে।ব্যতিক্রম: হানাফি ও মালিকি মাযহাব অনুযায়ী মুখ এবং হাতের তালু ঢাকা ফরজ নয়, তবে ফিতনার আশঙ্কা থাকলে ঢাকা উত্তম।নেকাব/বোরখা (মুখ ঢাকা):কুরআন ও হাদিস: কুরআনে সরাসরি মুখ ঢাকার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ নেই, তবে সূরা আহজাব (৩৩:৫৯) এ জিলবাবের মাধ্যমে শরীর ঢাকার কথা বলা হয়েছে। হাদিসে রয়েছে, নবী (সা.)-এর স্ত্রী এবং সাহাবী নারীরা মুখ ঢেকেছিলেন, বিশেষ করে নামাহরামের সামনে। (হাদিস: সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৪৭৫৮)মতভেদ:শাফিঈ ও হাম্বলি মাযহাব: মুখ ও হাত ঢাকা (নেকাব) ফরজ বলে মনে করা হয়, কারণ এটি ফিতনা প্রতিরোধে সহায়ক।হানাফি ও মালিকি মাযহাব: মুখ ও হাত ঢাকা ফরজ নয়, তবে মুস্তাহাব (উত্তম)। তবে ফিতনার আশঙ্কা থাকলে (যেমন, সমাজে অশালীনতা বা নিরাপত্তার অভাব) নেকাব পরা ফরজ হয়ে যায়।আধুনিক আলেমদের মত: কিছু সমকালীন আলেম (যেমন, শায়খ আলবানি) মনে করেন, নেকাব ফরজ নয়, তবে উত্তম, যদি সামাজিক পরিস্থিতি এটার প্রয়োজন না করে।ব্যতিক্রম: হজের সময় ইহরাম অবস্থায় মহিলার জন্য মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ, তবে তারা মাথা ও শরীর ঢেকে রাখেন। (হাদিস: সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৮৫৫)উপসংহার:হিজাব (শরীর ও মাথা ঢাকা): বেশিরভাগ আলেমের মতে, এটি ফরজ এবং ইসলামের মৌলিক বিধান। এটি শালীনতা ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য অপরিহার্য।নেকাব/বোরখা (মুখ ঢাকা): এটি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কিছু মাযহাব এটিকে ফরজ মনে করে, অন্যরা মুস্তাহাব বলে। তবে ফিতনার আশঙ্কা থাকলে সব মাযহাবই এটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।সামাজিক প্রেক্ষাপট: পর্দার বিধান প্রয়োগে স্থানীয় সংস্কৃতি ও পরিস্থিতি বিবেচনা করা যায়, তবে শরিয়াহর মূলনীতি অবশ্যই মানতে হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন