ধোঁয়ার ভিতর জীবন

ছোটগল্প: “ধোঁয়ার ভিতর জীবন”
সন্ধ্যা নামছে। কুয়াশার মতো ধোঁয়া ঘিরে রেখেছে ছোট্ট টিনের ঘরটা। ঘরের মালিক পাশের বাড়িতে থাকে—এ ঘরটা তারা ভাড়ায় দেয়। রোজ কিছু বিড়ির  পাতা কাটার পরের বাকী অংশ  পড়ে থাকে উঠোনে।

শান্তি বিড়ি বানায়। একপাশে সন্তান কে পড়ায়, অন্যদিকে বিড়ি পাকায়। আঙুলে নিকোটিনের দাগ, চোখে ঘুমহীনতা, শরীরে অপুষ্টি । একহাজার টা বিড়িতে মাত্র একশো বিশ টাকা মেলে—তা দিয়েই চলে সংসার।

স্বামী অমিত একসময় পাশের বাজারে এক বেসরকারি স্কুলে পড়াতো, টিউশন করাতো। এখন স্কুলটা বন্ধ হয়ে গেছে—করোনা আর বাজার মন্দায়। টিউশনও আর কেউ দেয় না।

ছেলে তন্ময় ছয় বছর বয়সে খেলনা চায়, মোবাইলে কার্টুন দেখে। “বাবা, আমিও একটা গাড়ি চাই!”
অমিত তাকে কোলে তুলে নেয়, মুখে হাসি আনে, কিন্তু চোখে একটা হেরে যাওয়ার ঘোলাটে আভা।

শান্তি মাঝে মাঝে রাগে বলে, “সবই আমি করবো? তুমি তো শুধু ঘরে বসে থাকো।”
অমিত চুপ করে থাকে—সে বোঝে, শান্তির ক্লান্তির শব্দ এটা।

তারা নিজের ঘর করেনি, পরের ঘরে আশ্রিত। গ্রামের মানুষ মুখে বলে, “স্ত্রী চালায় সংসার”—আর মনে মনে হাসে। অমিত প্রতিদিন সেই হাসির নিচে নিজেকে লুকায়।

তবে রাতে যখন তন্ময় ঘুমিয়ে পড়ে, তখন অমিত শান্তিকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি ক্লান্ত?”
শান্তি বলে, “হ্যাঁ… কিন্তু তোর পাশে থাকলে একটু হালকা লাগে।”

সেই ছোট্ট উত্তরটাই হয়তো তাদের বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় আশ্রয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শেরপুর: ইতিহাস ও বর্তমানের এক হৃদয়ছোঁয়া গল্প

শেরশাহবাদিয়া ভাষা: বাংলা ভাষার আঞ্চলিক রূপ না কি ভিন্ন একটি লোকভাষা?

সাবান। কোনটা কি ধরনের। সরকারি নির্দেশনামাতে সাবান সম্পর্কে কি বলা আছে জানতে পড়ুন...