Knowledge vs Wisdom নলেজ ও উইশডম
নলেজ অথবা পোষা কুকুর / দেবাশিস লাহা
Knowledge এবং wisdom দুটি শব্দের অর্থই এক কথায় জ্ঞান। অথচ এরা কখনই পরস্পরের হাত ধরে চলেনি। এক সঙ্গে, এক অভিমুখে চলা তো দূরের কথা, বরং বিপরীত পথে হেঁটেছে। পারস্পরিক সম্পর্কটি বৈরিতা দিয়েই চিহ্নিত হয়েছে। কেন? গভীরে গেলেই, বিষয়টি কিঞ্চিৎ পরিষ্কার হবে। education এর সঙ্গে knowledge শব্দটি এমনভাবে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে, ( যা অবশ্যই আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার প্রভাব) যে knowledge চাইলে অক্ষর জ্ঞান অর্থাৎ literate হওয়া একান্তই আবশ্যক। knowledge এর সঙ্গে literacy র এই সম্পর্ক যে আধুনিক কালেই ঘটেছে এমন নয়। সুদূর অতীত অর্থাৎ প্রাচীন কালেই এই গাঁটছড়ার কাজটি সম্পন্ন হয়েছিল, যা আধুনিক ডিগ্রির মোড়কে আরও চমকদার, চোখ ধাঁধানো হয়ে উঠেছে। প্রমাণ চান? বর্তমানে জীবিত, সুপরিচিত, বিখ্যাত কয়েকজন ব্যক্তির নাম বলুন, যাঁরা আপনার মতে যথেষ্ট জ্ঞানী। খুঁজে দেখুন, এঁদের মধ্যে অক্ষরজ্ঞান নেই এমন কেউ আছেন নাকি। একজনও পাবেননা। অর্থাৎ জ্ঞানের সঙ্গে অক্ষরজ্ঞানই কেবল অপরিহার্য নয়, যত বড় ডিগ্রি, যত বড় পদ, তত বেশি শিক্ষিত, জ্ঞানী । কিন্তু এই জ্ঞান নিতান্তই knowledge! কিন্তু wisdom? সে কোন প্রকৃতির? তার সঙ্গে কি অক্ষরজ্ঞান, ডিগ্রির যোগাযোগ আছে? থাকলেই বা কতটুকু? না,নেই। অর্থাৎ অক্ষরজ্ঞানহীন, "অশিক্ষিত " মানুষও wise হতে পারে। উদাহরণ চাই? আপাতত দুটি নামই যথেষ্ট। সক্রেটিস,রামকৃষ্ণ । এঁরা কেউই "শিক্ষিত" ছিলেন না। অক্ষরজ্ঞান থেকেও দূরে। পথে ঘাটে বিতর্ক জুড়ে দেওয়া সক্রেটিসের জন্য কী জাতীয় বিশেষণ বরাদ্দ করা হয়েছিল, অনেকেই জানেন। একটি অবশ্যই মূর্খ! পাপী তো বটেই! কারণ তিনি সমসাময়িক গ্রিক দেবদেবীদের বিনা প্রশ্নে গ্রহণ করেননি। এসব দেবতার চাইতে পথ কুকুরের পুজো করা ভাল। এমন পর্যবেক্ষণও রেখেছিলেন। এই "মহাপাপী" " মূর্খ" মানুষটিকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হল। আজ্ঞে হ্যাঁ, সর্বকালের সেরা এই দার্শনিককে হেমলক পানে বাধ্য করা হয়েছিল। সক্রেটিস "মূর্খ" ছিলেন! বেশ! তবে "জ্ঞানী " কারা ছিলেন? সক্রেটিস " পাপী " ছিলেন! বেশ তবে পুণ্যবান কারা ছিলেন? কেন সমসাময়িক ডিগ্রিধারী, রাষ্ট্র স্বীকৃত পদাধিকারী! এই যেমন এনিটাস, লাইকন, মেলিটাস, যাঁরা অভিযোগ করেছিলেন, সক্রেটিস নাকি যুব সমাজকে নষ্ট করছেন, মাথা খাচ্ছেন! এঁদের knowledge থাকলেও wisdom ছিলনা, অথবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস ছিলনা। বলাই বাহুল্য wisdom এর সঙ্গে তথাকথিত ডিগ্রি, শিক্ষার যোগাযোগ নেই। শিক্ষিত, অশিক্ষিত নির্বিশেষে wise হতে পারেন৷ তবে knowledge এবং wisdom এর ফারাক কোথায়? খেয়াল করলেই দেখবেন, knowledge এর আগে superficial ( উপর উপর) বিশেষণটি ব্যবহার হলেও wisdom এর সঙ্গে চলেনা! জীবন, জগৎ, প্রকৃতি লব্ধ উপলব্ধিই Wisdom, যা প্রথাগত শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হয়না। কেন হয়না? অক্ষর, লিপি আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে যে "জ্ঞান" অর্জনের রাস্তা খুলে গেল, তা প্রায় প্রথম থেকেই রাষ্ট্র, রাজার নিয়ন্ত্রণে চলে গেল। তৈরি হল নির্ঘন্ট, সিলেবাস। কতটা শেখালে, কতটা না শেখালে, কতটা বললে, কতটা না বললে রাজ্যপাট বজায় থাকে, প্রজাদের বাগে রাখা যায়, সেই সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের হাতে চলে গেল। ধর্ম, সমাজবিদ্যা, ইতিহাস, দর্শন কোনো বিষয়ই বাদ গেলনা। প্রতিটি বিষয়ের উপরই এই নজরদারি। (অনেকেই ভেবেছিলেন বিজ্ঞান এর বাইরে। অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে manipulate, distort করা যায়না। এ যে কত বড় ভুল ধারণা করোনা প্ল্যানডেমিকই বুঝিয়ে দিচ্ছে। ) তবে কী দাঁড়াল? knowledge, education শাসকের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলেও সিলেবাস বানিয়ে wisdom কে বাগে আনা গেলনা! সে একই রকম রয়ে গেল। স্বাধীনচেতা, মুক্ত! শাসক নিয়ন্ত্রিত knowledge এর ভার সাময়িকভাবে দাবিয়ে রাখলেও সে বার বার ফিনিক্স হয়ে ওঠে। তাই "মূর্খ" সক্রেটিসও একদিন শ্রেষ্ঠ দার্শনিক হয়ে ওঠেন। শাসকের অস্ত্র হয়ে উঠতে পারলেও, কয়েক ডজন গ্যালিলিওকে অত্যাচার, নিপীড়ন করলেও knowledge কখনও মানবসভ্যতার অভিমুখ নির্ধারণ করতে পারেনি। wisdom এর কাছে পরাজিত হওয়ার জন্যই তার জন্ম। আপাতদৃষ্টিতে যতই প্রভাবশালী হোক, জন্মলগ্ন থেকেই সে মালিকের পোষা কুকুর। গলায় শেকল নিয়ে সে কখনও wisdom কে অতিক্রম করতে পারেনি, পারবেনা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন