ইংরেজি বাগধারা --১/ দেবাশিস লাহা
ইংরেজি বাগধারা --১/ দেবাশিস লাহা
বাগবিধি বা বাগধারা ইংরেজিতে যাকে idiom অথবা idiomatic expression বলে আদতেই বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। প্রায় সবার পেছনেই একটি ইতিহাস কিম্বা ঘটনা লুকিয়ে থাকে। সে যে ভাষারই হোক। এই যেমন ধরুন --লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন। এই বিশেষ গৌরী সেন মহাশয়ের নাম শোনেন নি এমন বাঙালি কমই আছেন। বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রীই এসব না বুঝে মুখস্থ করে। তাছাড়া উপায়ই বা কী! কিন্তু তেমন আগ্রহী কোন ছাত্র ছাত্রী পেলে পড়ানোর সময় এই ইতিহাসগুলো বলতে ইচ্ছে করে। সেটাই স্বাভাবিক। Suggestive আর mechanical পড়াশোনার বাইরেও তো বেরোতে ইচ্ছে করে। যাক আজ এমনই দু একটি ইংরেজি বাগধারা অর্থাৎ idiom এর গল্প শোনাব।
Hobson's choice ইংরেজি ভাষার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইডিয়ম। এর অর্থ হল Accept or leave the offer অথবা No choice at all. ব্যাপারটা কী দাঁড়াল? Choice অথচ choice ই নেই! এ আবার কেমন কথা! তবে ঘটা করে চয়েস দেওয়া কেন বাপু! কারণ আছে বন্ধু। আসুন এবার একটু ইতিহাসটা জেনে নেওয়া যাক (যদিও অনেকেই হয়ত জানেন)।
কেম্ব্রিজে এক ঘোড়া ব্যবসায়ী ছিলেন। নাম টমাস হবসন। ঘোড়া বিশেষ করে রেসের ঘোড়া বিক্রির ক্ষেত্রে তাঁর একচেটিয়া বাজার ছিল। অতএব দাপট তো থাকবেই। তাঁর আস্তাবলে লাইন দিয়ে ঘোড়াগুলি বাঁধা থাকত। দরজার কাছ থেকে শুরু করে পেছনের দেওয়াল পর্যন্ত। কোনো ক্রেতা এলেই তিনি খুব সৌজন্য সহকারে জানাতেন-- মহাশয়, আপনি যে কোনো অশ্ব পছন্দ করিতে পারেন, কিন্তু আমি দরোজা সংলগ্ন ঘোড়াটি ব্যতীত কোনোটিই বিক্রয় করিব না। যাহ! এটা কি হল! হ্যাঁ হবসনের নিয়ম ছিল দরজার কাছে বাঁধা প্রথম ঘোড়াটি বিক্রি হবে। তারপর দ্বিতীয় ঘোড়াটি প্রথম ঘোড়ার জায়গায় আসবে। তৃতীয়টি দ্বিতীয়র জায়গায়। অর্থাৎ রোল করে বিক্রি। পোষালে নিন, নইলে কেটে পড়ুন। বুঝুন কাণ্ড! তার মানে কোনো চয়েসই রইল না! শুধু গালভরা নাম Hobson's choice!
আরেকটি মজাদার ইডিয়ম হল peeping Tom! এর পশ্চাৎপটটি জানা থাকলে ইতিমধ্যেই অনেকে হেসে ফেলেছেন! তাই না? যাক বলেই ফেলি। (কথিত আছে) ইংল্যাণ্ডের কোভেন্ট্রিতে লেডি গোডিভা নামক এক প্রজাদরদী কাউন্টেস বা রানি ছিলেন।
একবার হল কী তাঁর স্বামী অর্থাৎ কোভেন্ট্রির রাজা প্রজাদের উপর অত্যধিক করের বোঝা চাপিয়ে দিলেন। দরিদ্র প্রজাদের নাভিশ্বাস উঠল। গোডিভা তাঁর স্বামীকে অনুরোধ করলেন তিনি যেন এই অমানবিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন। কিন্তু রাজা কর্ণপাত করলেন না। রাণী তো রেগে লাল। অনেক বলেও কাজ না হওয়ায় তিনি ঘোষণা করলেন যদি এই কর তুলে না নেওয়া হয়, তিনি প্রতিবাদ করবেন। কীভাবে? সম্পূর্ণ উলঙ্গ দেহে ঘোড়ার পিঠে চড়ে তিনি নগর পরিক্রমা করবেন। ভাবলেন এতে নিশ্চয় কাজ হবে। রাজা এবার সিধে হবে। কিন্তু চিঁড়ে তো ভিজলই না, বরং রাজা বললেন ধুত্তোর এসব হয় নাকি! যত্তসব ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল। ব্যাস রানি তো আগুনের মত ফুঁসতে লাগলেন। রাজা এসব পাত্তা না দিয়ে পাশের রাজ্যে বেড়াতে চলে গেলেন।
কিন্তু রানি নাছোড়বান্দা। নির্দিষ্ট দিন এবং আসতেই তিনি আবার তাঁর ইচ্ছে ব্যক্ত করলেন। মন্ত্রীর তো ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা! রাজা দেশে নেই। তার উপর এই সব উটকো ঝামেলা! কিন্তু কিছু একটা তো করতে হবে। রানিকে যদি সবাই উলঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলে রাজা কিম্বা রাজ্য কারও সম্মানই থাকবে না। কিন্তু রানি গোদিভা একেবারে নাছোড়বান্দা। কি করা যায় কি করা যায় ভাবতে ভাবতে মন্ত্রী নির্দেশ দিলেন সমস্ত নগরে ঢেঁড়া পিটিয়ে দেওয়া হোক ওই সময়ে রাস্তায় যেন কেউ না থাকে। প্রত্যেকটি প্রজার বাড়ির দরজা জানালা সব বন্ধ করা হল। ছাদে ছাদে কেবল নারী রক্ষী। তাঁরা নজর রাখবে। আদেশ অমান্য করলেই গর্দান যাবে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মানুষ তো দূরের কথা, রাস্তা থেকে কাক পক্ষী ও উধাও হয়ে গেল। নারী সেপাই ছাড়া আর কোন প্রাণীর টিকি পর্যন্ত দেখা গেল না। মন্ত্রী এবার নিশ্চিন্ত। নির্দিষ্ট সময়ে রাণীও বেরিয়ে পড়লেন। পিঠের উপর ঘন লম্বা একরাশ চুল ছাড়া আর কোন আবরণ অথবা আভরণ নেই। ঘোড়া এগিয়ে চলল।
পথের পাশেই টমের বাড়ি। হ্যাঁ এই পথ দিয়েই রাণীর যাবার কথা। টমের ব্যাপক কৌতূহল হল। আহা! রাণী বলে কথা! একবার এক ঝলক মাত্র দেখেছিল। দূর থেকে। রাজার সঙ্গে নগর পরিক্রমায় বেরিয়েছিলেন। আহা! কী রূপ! পাগল করা রঙ! নাহ এই সুযোগ ছাড়া যাবে না। দেখতেই হবে এই পরমাসুন্দরীকে। কিন্তু দরজা জানালা সব যে বন্ধ। বাইরে বেরোলেই গর্দান যাবে। উপায় একটা বের করতেই হবে। আরে ওই তো ওই জানালাটায় একটা ফুটো! উই পোকার কাজ। আহা! কী ভাল এই পোকাগুলো! খাবার একেবারে সাজিয়েই রেখেছে। চোখটা একবার গলিয়ে দিলেই হল! তারপর আহ! অমৃত আর অমৃত!
টমবাবু রেডি! ওই যে এগিয়ে যাচ্ছেন। সামনেই ফুটো!
Tom, you are peeping! Oh my God!
হায়! হায়! এ কার চিৎকার! একেবারে বাড়া ভাতে ছাই! পেছন ফিরেই দেখে ঝাঁটা হাতে বউ এসে দাঁড়িয়েছে!
ওরে মিনসে আমার তুই যাবি কোথায়! তোকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি বুঝলি! এমন কিছু যে হবে আমি জানতুম! তাই তখন থেকে তোকে তক্কেতক্কে রেখেছি। উঁকি মারা হচ্ছে না! দেখ এবার ঝাঁটার বাড়ি কেমন লাগে।
হ্যাঁ বন্ধু peep মানে উঁকি মারা। টম উঁকি মেরেছিল। কিন্তু তাতে কী? তার পর থেকে এক অদ্ভুত ইডিয়মের জন্ম হল-- peeping Tom
অর্থ দাঁড়াল যে ব্যক্তি গোপনে কোন যৌন দৃশ্য বা কাণ্ডকারখানা দেখে বা দেখার চেষ্টা করে। এক কথায় voyeur!
হা হা হা!
--
অমৃতস্য পুত্রাঃ দ্বিতীয় খণ্ড থেকে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন